স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অনানুষ্ঠানিক উপাদানসমূহের ভূমিকা আলোচনা কর

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অনানুষ্ঠানিক উপাদানসমূহের ভূমিকা আলোচনা কর
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অনানুষ্ঠানিক উপাদানসমূহের ভূমিকা আলোচনা কর

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অনানুষ্ঠানিক উপাদানসমূহের ভূমিকা আলোচনা কর

  • অথবা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অনানুষ্ঠানিক উপাদানসমূহের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর । 
  • অথবা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অনানুষ্ঠানিক উপাদানসমূহের ভূমিকা বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : স্থানীয় সরকার হলো জনপ্রশাসনের এমন একটি রূপ, যা সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করে। 

স্থানীয় সরকার মূলত আইনের দ্বারা প্রাপ্ত ক্ষমতায় বা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান দেশসমূহের মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত এবং এমনটি যেখানে অনুরূপ ব্যবস্থা বিদ্যমান সেখানেও। 

স্থানীয় সরকার তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের সেবাকে পৌঁছে দেয় । কেননা বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের চেয়ে বেশি মানুষ গ্রামে বসবাস করে। 

কাজেই এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াত, আত্মকর্মসংস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তৃণমূল জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করা সম্ভব।

● স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অনানুষ্ঠানিক উপাদানসমূহের ভূমিকা : স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কাঠামো স্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং উভয় কাঠামো একে অপরকে প্রভাবিত করে কিংবা একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হয়। অনানুষ্ঠানিক কাঠামোর উপাদানসমূহ নিম্নরূপ :

১. পেশাজীবী সংগঠন : রিকশা মালিক সমিতি, বাস মালিক সমিতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি দোকান মালিক সমিতি এদের সাংগঠনিক শক্তি সমাজকে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে ।

২. রাজনৈতিক দল : রাজনৈতিক দলসমূহ যদি তাদের ইশতাহার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে জনসেবাকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করে। 

কিন্তু বাস্তব বিচারে রাজনৈতিক দলের নেতিবাচক উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা গ্রহণ, ক্ষমতাকে সুসংহত করা, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা। 

ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সামরিক কিংবা বেসামরিক সরকারগুলো তৃণমূল পর্যায়ে একটি সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করে। 

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করার জন্য জাতীয় প্রতীকে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

৩. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রভাব : বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্তু ধর্মহীন না। ঈদ, পূজাপার্বণে নানা ধর্মের মানুষ একসাথে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। 

মসজিদভিত্তিক সমাজ কিংবা মন্দির অথবা গির্জাভিত্তিক সমাজ চলমান সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে রাখে। মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, মন্দিরের ঠাকুর, গির্জার পুরোহিত এরা এখনো। 

সমাজের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। এদের নির্দেশ, আদেশ, অনুশাসন, নিষেধ সমাজের মানুষ মেনে চলে। এদের প্রভাব সমাজ কাঠামোকে প্রভাবিত করে।

৪. বুনিয়াদি পরিবার : স্থানীয় সরকার কাঠামোতে প্রভাবশালী বা জোতদার পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্থানীয় সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্ত অন্যরা মেনে নেয়। 

স্থানীয় সম্পদশালী, অর্থশালী ব্যক্তিবর্গ অর্থ, জনবল ও সমর্থন দিয়ে নির্বাচনের সময় স্থানীয় সরকারের সদস্যদের নির্বাচিত করে।

৫. শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রভাব : বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রামীণ মানুষকে সচেতন করে তুলেছে। 

শিক্ষা মানুষের অন্তরচক্ষু খুলে দেয়। মানুষ ভালোমন্দ হিতাহিত বিচারবিশ্লেষণ করার সুযোগ পায়। পাশাপাশি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি; যেমন- মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুকের বদৌলতে গ্রামীণ সমাজ কাঠামো ভেঙে যাচ্ছে এবং আধুনিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

৬. এলিট : সমাজে প্রতিভাবান ও মনীষীদের চিন্তাধারা আচারব্যবহার, রীতিনীতি, লেখনী প্রভৃতি সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৭. বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন : বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে যারা গ্রামের কৃষক, শ্রমিক ও যুবককে সংগঠিত করে ও নানাবিধ সেবা শিক্ষা, খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে। 

স্থানীয় প্রতিনিধি যারা নির্বাচনে চেয়ারম্যান সদস্য হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তারা অনেকেই এসব কিছুর সাথে সম্পৃক্ত থাকে। এসব সংগঠন তাদের সমর্থন ও প্রচারের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে লোকদের নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৮. আমলাতন্ত্র : বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৯ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মূল চেতনা হচ্ছে আঞ্চলিক সরকারগুলো পরিচালিত হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা।

কিন্তু লক্ষ করা যায়, ব্রিটিশ পাকিস্তান অদ্যাবধি বাংলাদেশ সরকার এ স্বায়ত্তশাসনের নামে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে আমলাতন্ত্র দ্বারা স্থানীয় সরকারগুলো পরিচালিত করছে। 

১৯৭৬ সালের পরবর্তী পর্যায়ে একমাত্র ইউনিয়ন ও পৌরসভাগুলো জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। 

কিন্তু উপজেলা ও জেলাপরিষদ আমলাতন্ত্রের কঠিন বেড়াজালে আবদ্ধ। আমলারা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারসমূহে সচিবের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করার কথা। 

কিন্তু বাস্তবে উপজেলা, জেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রকল্প গ্রহণ বাস্তবায়ন, তত্ত্বাবধান করা আমলাদের কাজে পরিণত হয়েছে। কাজ স্থানীয় প্রতিনিধি আমলাতন্ত্রের কাছে বর্তমানে অসহায়। 

উপজেলা পর্যায়ে গঠিত ১৩টি কমিটির মধ্যে ৪টি কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আর অবশিষ্ট ১টি কমিটির সভাপতি পদাধিকারবলে আমলা তথা ইউ, এন. ও. 

৯. বিভিন্ন এনজিও কার্যক্রম : আমাদের দেশে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশাসহ অনেক NGO রয়েছে যারা সমাজের দরিদ্র অসহায় সুবিধাবঞ্চিত লোকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । 

এসব প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগী লোকজন সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । 

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, স্থানীয় পর্যায়ে গৃহীত সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকারের অনানুষ্ঠানিক উপাদানসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

এ উপাদানসমূহ এক ধরনের সংযোগমূলক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। গ্রামীণ সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধিশালী করতে অনানুষ্ঠানিক উপাদানের ভূমিকা অনেক । 

অনানুষ্ঠানিক কাঠামোর প্রতিনিধিগণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হলেও তারা উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত সরকারি বেসরকারি সব সেবাসমূহ জনগণের নিকট পৌঁছে দেয়। 

স্থানীয় সরকারের সরকারি নেতৃবৃন্দের ন্যায় বেসরকারি নেতৃবৃন্দ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক অবদান রাখে । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url