সিটি কর্পোরেশনের গঠন ও কার্যাবলি উল্লেখ কর
সিটি কর্পোরেশনের গঠন ও কার্যাবলি উল্লেখ কর |
সিটি কর্পোরেশনের গঠন ও কার্যাবলি উল্লেখ কর
- অথবা, সিটি কর্পোরেশনের গঠন ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মহানগর এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সিটি কর্পোরেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৭৪ সালে গৃহীত 'ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী ১৯৭৮ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকা পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়।
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরগণ নিজ সিটির প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে নির্বাচিত হয়। সিটি কর্পোরেশনের সকল পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।
জনগণ একদিকে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সুবিধা অসুবিধার কথা সরকারকে জানাতে পারে।
অন্যদিকে, সরকারের সমস্ত সিদ্ধান্তের কথা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণ অবহিত হতে পারে।
সিটি কর্পোরেশনের গঠন : ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর জারীকৃত ‘স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯' এ সিটি কর্পোরেশনের গঠন সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে।
এ আইন অনুসারে একজন মেয়র, নির্ধারিত সংখ্যক সাধারণ কাউন্সিলর এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত নির্ধারিত সংখ্যক কাউন্সিলর নিয়ে সিটি কর্পোরেশন গঠিত হবে।
মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলরগণ জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন।
সরকারি প্রজ্ঞাপন দ্বারা সিটি কর্পোরেশনের অধীন এলাকার জনসংখ্যা ও আয়তনের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ওয়ার্ডে বিভক্ত করে প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে একজন করে সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচিত করা হয়।
আর মহানগরের জনসংখ্যার ভিত্তিতে কাউন্সিলরদের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। প্রতি তিনটি ওয়ার্ডকে নিয়ে একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ড গঠন করা হয়, যেখান থেকে একজন নারী কাউন্সিলর নির্বাচন করা হয় । বর্তমানে বাংলাদেশে ১২টি সিটি কর্পোরেশন রয়েছে।
● সিটি কর্পোরেশনের কার্যাবলি : নিম্নে সিটি কর্পোরেশনের কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :
১. জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা : মহানগরের জনস্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের ওপর ন্যস্ত থাকে। সিটি এলাকার কোনো স্থান বা ইমারত অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকলে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন পালন করবে।
২. নগর পরিকল্পনা : মহানগরের সৌন্দর্য ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য সিটি কর্পোরেশন সুপ্রশস্ত রাস্তাঘাট নির্মাণ, পার্ক, উদ্যান ও মুক্তাঙ্গন নির্মাণ করে । রাস্তার পাশে আলোর ব্যবস্থা করে। অভ্যর্থনা গেট নির্মাণ, আকর্ষণীয় প্রাচীর নির্মাণ এবং রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থা করে ।
৩. চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা : সিটি কর্পোরেশন নিজ উদ্যোগে কিংবা সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা স্থাপন ও পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও চিকিৎসা সাহায্য প্রদানকল্পে সমিতি গঠনে উৎসাহ দান, চিকিৎসা বিদ্যার উন্নয়ন, স্কুল ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রভৃতি করতে পারবে।
৪. রাস্তাঘাট মেরামত ও নতুন রাস্তা তৈরি : সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন ব্যতীত সিটি এলাকায় কোনো নতুন রাস্তা তৈরি করা যাবে না। সিটি কর্পোরেশন নতুন রাস্তা তৈরির পাশাপাশি পুরাতন রাস্তা সংস্কার করতে পারবে।
রাস্তা নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের পাশাপাশি রাস্তায় পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা, রাস্তায় পানি দিয়ে ধৌতকরণের ব্যবস্থা এবং রাস্তার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
৫. খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের নিয়ন্ত্রণ : ভেজালমুক্ত খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ, হোটেল রেস্তোরাঁয় উন্নত মানের খাবার পরিবেশন, পচা ও বাসি খাবার নিষিদ্ধকরণ, মাদকদ্রব্য সেবন রোধ, মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন এবং মাদকদ্রব্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনভঙ্গের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
৬. সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ : কর্পোরেশন সমগ্র সিটির জন্য একটি সুপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। আর এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সিটি কর্পোরেশন নিজ ভৌগোলিক এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমির উন্নয়ন সাধন বা তাতে কোনো দালান বা ইমারত নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করতে পারবে।
৭. শিক্ষাব্যবস্থা : সিটি কর্পোরেশন নিজ ভৌগোলিক এলাকায় শিক্ষাসেবা দানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং শিক্ষার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারবে। কর্পোরেশনভুক্ত এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে অর্থায়ন করতে পারবে ।
৮. নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ : সিটি কর্পোরেশনভুক্ত এলাকায় অগ্নিনিরোধ ও অগ্নিনির্বাপণের জন্য দমকল বাহিনী গঠন করতে পারবে।
যদি কোনো ব্যক্তি কর্পোরেশনকে এ কাজে বাধা প্রদান করে তবে কর্পোরেশন তাকে অপসারণের আদেশ দিতে পারবে। অধিকন্তু জনগণের জানমাল রক্ষার্থে কর্পোরেশন যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
৯. স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদন : সিটি কর্পোরেশন নিজ এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদন কেন্দ্র স্থাপন করে থাকে। পাশাপাশি সেগুলো সংরক্ষণ, পরিচালনার কাজও করে থাকে। এছাড়াও পরিবার পরিকল্পনা উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনগণকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে ।
১০. গৃহনির্মাণ নিয়ন্ত্রণ : সিটি কর্পোরেশন মহানগরের বাড়িঘর, হাটবাজার নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিনা অনুমোদনে নির্মিত বাড়িঘর, দোকানপাট, হোটেল, রেস্তোরাঁ, বাজার, শিল্পকারখানা ভেঙে দেওয়ার ও উচ্ছেদ করার ক্ষমতা কর্পোরেশনের হাতে ন্যস্ত থাকে।
১১. বিচারসংক্রান্ত কাজ : মহানগরীর শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের হাতে ন্যস্ত থাকে। শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ছোটখাটো বিচারের মীমাংসা করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের ওপর ন্যস্ত। বিবাহবিচ্ছেদসংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি সিটি কর্পোরেশন করে থাকে।
১২. পানি সরবরাহ ও দূষিত পানি নিষ্কাশন : জনসাধারণের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবহারের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, কূপ ও নলকূপ খনন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ড্রেন ও নর্দমা পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করে এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন নির্মাণ করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সিটি কর্পোরেশন নগরের শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। সিটি কর্পোরেশন বহুমুখী কাজের মাধ্যমে নগরের শ্রীবৃদ্ধি করা তার অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য।
সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার স্থানীয় শহর পরিকল্পনার একটি স্তর, যা শহর বা নগরীর উন্নয়নের জন্য জাতীয় সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রশাসন ।