পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে যা জান লেখ
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে যা জান লেখ |
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে যা জান লেখ
- অথবা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের গঠন ও এর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আলোচনা কর ।
- অথবা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের গঠন উল্লেখপূর্বক এর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশে পার্বত্য এলাকার ভূমি যেমন সমতল ভূমি থেকে ভিন্ন প্রকৃতির, তেমনি এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীও ভিন্ন প্রকৃতির ।
দেশের অবশিষ্ট অঞ্চলের সর্বত্র সীমিত ভিন্নতা ব্যতীত সবাই মূলধারার জনগোষ্ঠী হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে ১৩টি উপজাতি সম্প্রদায়।
এসব উপজাতি সম্প্রদায়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও জীবনযাপন পদ্ধতি বাঙালিদের চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির। পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ সরকারের নিয়ন্ত্রণের অধীন। সরকার এ পরিষদ তত্ত্বাবধানের পুরো ক্ষমতা রাখে।
● পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের গঠন : সর্বমোট ২৫ জন সদস্য নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয় । আঞ্চলিক পরিষদ নিম্নরূপ সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হবে :
১. চেয়ারম্যান,
২. বারোজন উপজাতীয় সদস্য,
৩. ছয়জন অউপজাতীয় সদস্য,
৪. দুজন উপজাতীয় মহিলা সদস্য,
৫. একজন অউপজাতীয় মহিলা সদস্য ও
৬. তিনটি পার্বত্য জেলাপরিষদের চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে।
বারোজন উপজাতীয় সদস্যগণ নিম্নোক্তভাবে নির্বাচিত হবেন :
১. চাকমা উপজাতি থেকে পাঁচজন,
২. মারমা উপজাতি থেকে তিনজন,
৩. ত্রিপুরা উপজাতি থেকে দুজন,
৪. মুরং ও তঞ্চঙ্গ্যা উপজাতি থেকে একজন ও
৫. লুসাই, বোম, পাংখু, খুমী, চক ও খেয়াং উপজাতি থেকে একজন।
আগালিক পরিষদের মেয়াদকাল হবে ৫ বছর।
'পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৯৮' অনুসারে নিম্নোক্তভাবে এ পরিষদ গঠিত হবে :
১ জন চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিভেদে মোট ২৪ জন সদস্য, অর্থাৎ সর্বমোট ২৫ জন প্রতিনিধি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হবে।
আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্য তিন পার্বত্য জেলাপরিষদের সদস্যগণ কর্তৃক পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হবেন।
তাছাড়া সর্বমোট ৭৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে আঞ্চলিক পরিষদের সাংগঠনিক কাঠামো গঠিত। সরকারের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা আঞ্চলিক পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
● পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ : 'পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ১৯৯৮' অনুসারে সরকার পরিষদের কার্যকলাপ ও পরিচালকদের ওপর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারবে।
সরকার যদি মনে করে যে, পরিষদ জনস্বার্থ ও আইনবিরোধী কাজ করছে তবে সরকার নিম্নলিখিত উপায়ে পরিষদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারবে :
১. পরিষদ কর্তৃক গৃহীত যেকোনো পদক্ষেপ বাতিল ঘোষণা করতে পারবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে তা বাতিল করতে পারবে।
২. পরিষদ কর্তৃক গৃহীত জনস্বার্থবিরোধী ও আইনের পরিপন্থি যেকোনো রেজুলেশন স্থগিত করতে পারবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ জনকল্যাণার্থে রেজুলেশনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যাবলি সম্পাদন যদি জনস্বার্থবিরোধী ও দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থি হয় তাহলে সরকার তা বাতিল করতে পারে।
৩. জনস্বার্থবিরোধী ও আইনের পরিপন্থি যেকোনো প্রস্তাবিত কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ স্থানীয় উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে।
কিন্তু এসব কার্যক্রম দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থি হলে সরকার সকল প্রকার প্রস্তাবিত কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
৪. পরিষদকে তার নিজস্ব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের আওতাধীন কার্যব্যবস্থা অনুসরণপূর্বক কর্মসম্পাদনের আদেশ প্রদান করতে পারবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ তার নিজস্ব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের বাহিরে কোনো কাজ করলে সরকার তা বন্ধ করতে পারবে।
এ ধরনের যেকোনো আদেশ জারির ত্রিশ দিনের মধ্যে পরিষদ সরকারকে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত করবে। সরকার পরিষদের কাজের ব্যাপারে তদন্ত পরিচালনা করতে পারবে।
তাছাড়া নিম্নলিখিত কারণেও সরকার চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদ বিলুপ্ত করে পরিষদের দায়িত্ব নিজ হাতে গ্রহণ করতে পারে :
১. পরিষদ যদি অবৈধ কার্যকলাপের সাথে জড়িত হয়।
২. পরিষদের ওপর দায়িত্ব ও কর্তব্য যদি যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হয়।
৩. পরিষদ যদি কোনো জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের সাথে জড়িত হয়।
৪. পরিষদ যদি তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও স্থানীয় সরকার প্রশাসন, যা সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। সরকার কর্তৃক প্রণীত নিয়মানুসারে এ পরিষদ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
পরিষদকে কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হয় । তাছাড়া সরকার পরিষদের যেকোনো কাজের ওপর হস্তক্ষেপ কিংবা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা রাখে।