সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বোর্ড ও কমিটির ভূমিকা আলোচনা কর
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বোর্ড ও কমিটির ভূমিকা আলোচনা কর |
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বোর্ড ও কমিটির ভূমিকা আলোচনা কর
- অথবা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বোর্ড ও কমিটির ভূমিকা সংক্ষেপে লেখ।
- অথবা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বোর্ড ও কমিটির ভূমিকা উল্লেখ কর।
উত্তর ; ভূমিকা : সাম্প্রতিককালে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বোর্ড ও কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অর্থাৎ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণকারী বোর্ড ও কমিটি তাদের কার্যক্রম তাৎপর্যপূর্ণভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
সময়ের সাথে সাথে জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি তার পরিধি ও দায়িত্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বোর্ড ও কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দৃশ্যমান ।
• সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বোর্ড ও কমিটির ভূমিকা : বোর্ড ও কমিটি যেকোনো সামাজিক প্রশাসনের পূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাধারণত সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, নীতিনির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, তত্ত্বাবধান ও উদ্দেশ্য অর্জনে নিয়োজিত সর্বোচ্চ কর্মীদলীয় বোর্ড নামে পরিচিত। অন্যদিকে, দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ কর্মীদলকে কমিটি বলে।
নিম্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বোর্ড ও কমিটির ভূমিকা আলোচনা করা হলো :
১. তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ : সাধারণত প্রতিটি সামাজিক সংস্থার কার্যক্রম, তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা পালন করে বোর্ড ও কমিটি। বোর্ড যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নীতিনির্ধারণ করে এবং কমিটি তার বাস্তবায়ন (Policy Implementation) করে থাকে।
বোর্ড ও কমিটি সামাজিক সংস্থার যথাক্রমে মস্তিষ্ক ও অঙ্গ হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। নিম্নের চিত্রের সাহায্যে তা ব্যাখ্যা করা হলো :
২. সমস্যা চিহ্নিতকরণ : কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী যেসব সমস্যার সমাধানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সর্বপ্রথম সেসব সমস্যার বিষয়বস্তু, প্রধান দিক, গভীরতা প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে বোর্ড ও কমিটি ডাক্তারের ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. সমাধান অনুসন্ধান : প্রতিষ্ঠানের সমস্যা ব্যাপক ও একাধিক হলে এ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে এক বা একাধিক উত্তম সমাধানের অনুসন্ধান করতে হয়। কেননা সমস্যাটির সমাধানে একটি পথ বের হলে নির্বাহী বিকল্প সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
৪. উত্তম সমাধান বাছাই : যেকোনো সমস্যা সমাধানের একাধিক বিকল্প হতে সর্বোৎকৃষ্ট সমাধানটি নির্ণয় করে বোর্ড, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে বোর্ড বা কমিটি দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার সাথে নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।
৫. সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন : উদ্ভূত সমস্যার সর্বোৎকৃষ্ট সমাধানের পন্থা নির্ণয়পূর্বক তা বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
এক্ষেত্রে বোর্ড সমস্যার সমাধান বাস্তবায়নে নীতিনির্ধারণ করে এবং কমিটি নীতি বাস্তবায়ন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার গতি স্যার করে।
৬. পরীক্ষানিরীক্ষা : সামাজিক সংস্থার ব্যবস্থাপনা সিদ্ধান্ত গ্রহণের এ ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করার ওপর তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সেটি বোর্ড ও কমিটি পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখে থাকে।
৭. নির্বাহী নিয়োগদান : কোনো সংস্থার বোর্ড সবসময় ঐ সংস্থার জন্য নির্বাহী নিয়োগ ও তার দায়িত্ব নির্ধারণ করে থাকে । আর কমিটি এটি বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকে।
৮. পরিকল্পনা প্রণয়ন : বোর্ড সামাজিক সংস্থাসমূহের দৈনন্দিন সব কাজের জন্য স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে আর কমিটি এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
৯. বাজেট অনুমোদন : বোর্ড নির্বাহীর সাথে সমন্বয়পূর্বক সংস্থায় বাজেট প্রণয়ন, অনুমোদন, অর্থের নিরাপত্তা বিধান এবং সব তহবিলের সঠিক ব্যয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
১০. সংযোগ সাধন : সাধারণত বোর্ড সংস্থায় কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মী ও উপকরণাদির প্রাপ্যতা সম্পর্কে এবং তাদের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখে। সংস্থার কর্মসূচি বাস্তবায়নে এ প্রক্রিয়ায় বিরামহীনভাবে কর্ম চলতে থাকে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোনো প্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার কার্যকর বাস্তবায়নে বোর্ড ও কমিটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বোর্ড সংস্থার নীতি প্রণয়ন এবং কমিটি তা বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকে বিধায় বোর্ডকে সংস্থার মস্তিষ্ক এবং কমিটিকে অঙ্গ হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাই বলা যায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বোর্ড ও কমিটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।