স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায়সমূহ আলোচনা কর

স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায়সমূহ আলোচনা কর
স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায়সমূহ আলোচনা কর

স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায়সমূহ আলোচনা কর

  • অথবা, স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায়সমূহ বর্ণনা কর । 
  • অথবা, স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের কৌশলসমূহ ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : প্রতিটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে সেদেশের প্রশাসনের দক্ষতা ও সুষ্ঠু পরিচালনার ওপর। সর্বোত্তম সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রশাসনের কর্তব্য। 

প্রশাসনিক সুবিধার্থে সরকার দেশের সমগ্র অঞ্চলকে অনির্দিষ্টকৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিভক্ত করে সেখানে সরেজমিনে যে প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা হয় তাকে মাঠ প্রশাসন বলা হয় । 

সুষ্ঠু ও শক্তিশালী রাজনৈতিক বিকাশ ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের অভাবে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের সাথে মাঠ প্রশাসনের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি ।

● স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায় : নিয়ে স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায়সমূহ আলোচনা করা হলো

১. প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব নিরসন : মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ অধিকাংশই স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকার কারণে স্থানীয় স্বায়তশাসিত সরকারগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। 

যার ফলে মাঠ প্রশাসনের অভ্যন্তরে নানাবিধ দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের ভার কমিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে নিজস্ব উদ্যোগে প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করা গেলে মাঠ প্রশাসনের মধ্যকার সমস্যা নিরসন করা সম্ভব হবে। 

কেননা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের প্রকৃত সমস্যা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করে এবং এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়।

২. আমলা আধিপত্য হ্রাস : স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাঠ প্রশাসনের নিযুক্ত আমলা থাকে। আমলাদের আধিপত্যের কারণে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যাহত হয়, যা স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যকার স্বপ্ন সৃষ্টির অন্যতম কারণ। 

আমলাবৃন্দের আধিপত্য হ্রাস স্থানীয় সরকারের কাজের অগ্রগতিতে সহায়তা করবে। কেননা আমলাগণ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে সহায়তাকারী হিসেবে ভূমিকা পালনে বাধ্য।

৩. অর্থ সরবরাহ : বাংলাদেশে মাঠ প্রশাসনের আয়ের উৎস থেকে যে পরিমাণ অর্থ সংগৃহীত হয় তা দ্বারা মাঠ পর্যায়ে যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। 

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসনে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের ক্ষমতা স্থানীয় সরকার কার্যক্রম বাধ্য হওয়ার অন্যতম কারণ। তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের স্বাধীনতার স্বল্পতা রয়েছে। 

এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের অর্থসংগ্রহের নতুন উৎস সৃষ্টি করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক সবরকম সহযোগিতা প্রদান করতে হবে, যা স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের দ্বন্দ্ব নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

৪. অভ্যন্তরীণ সমন্বয়সাধন : স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূরীভূত করতে হবে। জেলা প্রশাসক জেলার সার্বিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাকে জেলা পুলিশ সুপারের ওপর নির্ভর করতে হয়। 

ফলে প্রাধান্য নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব প্রতিযোগিতা। গুরুত্ব ও মর্যাদার ভিত্তিতে উভয়ের মধ্যে দায়িত্ব অর্পণের মাধ্যমে এ বিরোধ নিষ্পন্ন করা সম্ভব।

৫. দুর্নীতি : স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। নৈতিক অবক্ষয়, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ইত্যাদির ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না। 

তাই প্রশাসন ব্যবস্থায় স্বজনপ্রীতি পরিহার করে সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতে প্রশাসন কাঠামোতে নৈতিক অবস্থা বজায় থাকবে এবং স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের দ্বন্দ্ব নিরসন করা যাবে।

৬. যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা : যেকোনো প্রশাসনকে সুদূরপ্রসারী করে তুলতে হলে যোগ্য, দক্ষ নেতৃত্ব ও গুণসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি অনুপস্থিত। 

দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য নেতৃত্ব পর্যায়ে নেতাদের পরিমিত জ্ঞান সরবরাহের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। তারই সাথে সাথে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করতে হবে এবং সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানার্জনে ক্ষমতা থাকতে হবে।

৭. সরকার ও বিরোধী দলের সহাবস্থান নিশ্চিতকরণ : বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় হচ্ছে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ ও বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্ক। আর এর প্রভাবে দেখা যায় রাজনৈতিক অস্থিরতা। 

এ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। তাই সরকারকে বিরোধী দলের প্রতি সহনশীল হওয়া দরকার, ঠিক তেমনি বিরোধী দলেরও উচিত সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা ।

৮. কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন : স্থানীয় ও মাঠ প্রশাসনের উন্নয়ন নিয়ে কেন্দ্র ও মাঠ পর্যায়ে দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। কারণ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দেখা যায়, কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা হয়। 

যার কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় । এর ফলে উভয় স্তরের মধ্যে বিবদমান সম্পর্ক অপসারণের মাধ্যমে একটি সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন । 

৯. কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা: কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করতে হবে। এ ধরনের যোগাযোগের ফলে উভয়ের মধ্যে উন্নত কর্মকাণ্ডের বিকাশ ঘটবে। 

এর ফলে প্রশাসকদের ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ লাঘব হয় এবং প্রশাসকগণ জনগণের সাথে অতি সহজে যোগাযোগ করতে পারে, যা স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের দ্বন্দ্ব নিরসনে সহায়ক ভূমিকা রাখে 

১০. দলীয়করণ : স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসন উভয়ই রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে। রাজনীতিমুক্ত থাকলেই উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দলীয় প্রভাব পড়বে না। জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত ব্যক্তিরা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের প্রতিটি স্তরে দায়িত্ব পালন করবে।

 জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত ব্যক্তিরা নির্দলীয়ভাবে নির্বাচিত হয়। প্রশাসনের মধ্যে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখলেই স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের দ্বন্দ্ব নিরসন করা সম্ভব।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসন উভয়ই স্থানীয় জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও ভাগ্যোন্নয়নের জন্য নিয়োজিত এবং পরিচালিত। 

কিন্তু বাস্তবে উভয়ের মধ্যে বিরোধ দিনদিন বেড়েই চলেছে । তাই স্থানীয় সরকারের ওপর মাঠ প্রশাসনের অশুভ প্রভাব পরিহার করে সহযোগিতামূলক সেবা প্রদানের মাধ্যমে সত্যিকারের স্বশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url