জেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর
জেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর |
জেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, জেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যা জান লেখ ।
- অথবা, জেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণনা দাও ৷
উত্তর ভূমিকা : জেলা পরিষদ হলো বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার একটি একক, যা রাষ্ট্রে বিদ্যমান তিন ধরনের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার জেলা পর্যায়ে কাজ করে।
এর প্রধান হলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং এ সংস্থা ৮টি খাত নিয়ে কাজ করে। একজন চেয়ারম্যান, পনেরো জন সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনের ৫ জন মহিলা সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত।
একটি নবগঠিত জেলা পরিষদের মেয়াদকাল পাঁচ বছর। জেলা পরিষদের নির্বাহী একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা । তিনি সরকারের উপসচিব পদমর্যাদার হয়ে থাকেন ।
জেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা : নিম্নে জেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. পরিষদ তহবিল গঠন : জেলা পরিষদ তহবিল নামে প্রত্যেক পরিষদের একটি তহবিল থাকবে। উক্ত তহবিলে নিম্নলিখিত অর্থ জমা হবে, যথা : জেলা পরিষদের উত্তরাধিকারী সেই জেলা পরিষদের তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ; পরিষদ কর্তৃক ধার্যকৃত কর, রেইট, টোল, ফি এবং অন্যান্য দাবি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ; পরিষদের উপর ন্যস্ত এবং তৎকর্তৃক পরিচালিত সকল সম্পত্তি হতে প্রাপ্ত আয় বা মুনাফা; সরকার বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের অনুদান প্রভৃতি।
২. পরিষদের তহবিল সংরক্ষণ, বিনিয়োগ :
• পরিষদের তহবিলে জমাকৃত অর্থ কোনো সরকারি ট্রেজারিতে বা সরকারি ট্রেজারির কার্য পরিচালনাকারী কোনো ব্যাংকে অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোনো প্রকারে রাখা হবে।
• পরিষদ নির্ধারিত পদ্ধতিতে উহার তহবিলের যেকোনো অংশ বিনিয়োগ করতে পারবে।
• পরিষদ কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে আলাদা তহবিল গঠন করতে পারবে এবং সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হলে উত্তরূপ তহবিল গঠন করবে এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে তা পরিচালনা করবে।
৩. পরিষদের তহবিলের প্রয়োগ : পরিষদের তহবিলের অর্থ নিম্নলিখিত খাতসমূহে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যয় করা যাবে, যথা :
• পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা প্রদান;
• এই আইনের অধীন পরিষদের তহবিলের ওপর দায়যুক্ত ব্যয়;
• এই আইন বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোনো আইন দ্বারা ন্যস্ত পরিষদের দায়িত্ব সম্পাদন ও কর্তব্য পালনের জন্য ব্যয়;
• সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত উহার তহবিলের ওপর দায়যুক্ত ব্যয় ।
৪. দায়মুক্ত বায় :
• পরিষদের তহবিলের ওপর দায়মুক্ত বায় নিম্নরূপ হবে, যথা :
• পরিষদের চাকরিতে নিয়োজিত কোন সরকারি কর্মচারীর জন্য দেয় অর্থ;
• কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পরিষদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত কোনো রায়, ডিক্রি বা রোয়েদাদ কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ;
• সরকার কর্তৃক দায়যুক্ত বলে ঘোষিত অন্য যেকোনো ব্যয় ।
৫. বাজেট প্রণয়ন : প্রতি অর্থবছর শুরু হওয়ার পূর্বে পরিষদ উক্ত অর্থ বৎসরে উহার সম্ভাব্য আয় ও ব্যয় সম্বলিত বিবরণী, অতঃপর বাজেট বলে উল্লিখিত, নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রণয়ন ও অনুমোদন করবে এবং উহার একটি অনুলিপি প্রেরণ করবে।
• বাজেটের অনুলিপি প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে সরকার, আদেশ দ্বারা, উক্ত বাজেট সংশোধন করতে পারবে এবং অনুরূপ সংশোধিত বাজেট পরিষদের অনুমোদিত ৰাজেট বলে গণ্য হবে।
• কোনো অর্থবছর শেষ হওয়ার পূর্বে যেকোনো সময় উক্ত অর্থ বৎসরের জন্য, প্রয়োজন হলে, সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন করা যাবে এবং উক্ত সংশোধিত বাজেটের ক্ষেত্রেও এই ধারার বিধানাবলি, যতদূর সম্ভব প্রযোজ্য হবে।
প্রথম পরিষদ যে অর্থ বৎসরে দায়িত্বভার গ্রহণ করবে সেই অর্থ বৎসরের বাজেট উক্ত দায়িত্বভার গ্রহণের পরবর্তী অবশিষ্ট সময়ের জন্য প্রণীত হবে এবং উক্ত বাজেটের ক্ষেত্রেও এই ধারার বিধানাবলি যতদূর সম্ভব প্রযোজ্য হবে।
৬. হিসাব : প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার পর পরিষদ উক্ত অর্থ বৎসরের আয় ও ব্যয়ের হিসাব প্রস্তুত করবে এবং পরবর্তী অর্থ বৎসরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা সরকারের নিকট প্রেরণ করবে।
৭. হিসাব নিরীক্ষা : নিরীক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ পরিষদের হিসাবসংক্রান্ত যাবতীয় বই ও অন্যান্য দলিল দেখিতে পারবে এবং প্রয়োজনবোধে পরিষদের চেয়ারম্যান ও যেকোনো সদস্য, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
৮. পরিষদ কর্তৃক আরোপিত কর : পরিষদ, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, দ্বিতীয় তফসিলে উল্লিখিত সকল অথবা যেকোনো কর, রেইট, টোল এবং ফি নির্ধারিত পদ্ধতিতে আরোপ করতে পারবে।
৯. কর সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি : পরিষদ কর্তৃক আরোপিত সকল কর, রেইট, টোল এবং ফি নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিজ্ঞাপিত হবে এবং সরকার ভিন্নরূপ নির্দেশ না দিলে, উক্ত আরোপের বিষয়টি আরোপের পূর্বে প্রকাশ করতে হবে।
১০. নমুনা কর-তফসিল : সরকার পরিষদের জন্য নমুনা কর-তফসিল প্রণয়ন করতে পারবে এবং অনুরূপ তফসিল প্রণীত হলে পরিষদ উহার কর, রেইট, টোল বা ফি আরোপের ক্ষেত্রে উক্ত তফসিল দ্বারা পরিচালিত হবে।
১১. করসংক্রান্ত দায় : কোনো ব্যক্তি বা জিনিসপত্রের ওপর কর, রেইট, টোল বা ফি আরোপ করা যাবে কিনা উহা নির্ধারণের প্রয়োজনে পরিষদ, নোটিসের মাধ্যমে, যেকোনো ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে বা দলিলপত্র, হিসাব বই বা জিনিসপত্র হাজির করার জন্য নির্দেশ দান করতে পারবে।
পরিষদের এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত যেকোনো কর্মকর্তা, যথাযথ নোটিস প্রদানের পর, কর আরোপযোগ্য কি না উহা যাচাইয়ের জন্য যেকোনো অঙ্গনে প্রবেশ এবং যেকোনো জিনিসপত্র পরিদর্শন করতে পারবেন।
১২. কর আদায় : পরিষদের সকল কর, রেইট, টোল এবং ফি নির্ধারিত ব্যক্তি কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে আদায় করা হবে । পরিষদের প্রাপ্য অনাদায়ী সকল কর, রেইট, টোল, ফি এবং অন্যান্য অর্থ Public Demand Recoverz Act, ১৯১৩ (Ben. Act III of 1913) এর অধীন সরকারি দাবি হিসাবে আদায়যোগ্য হবে ।
১৩. কর নির্ধারণের বিরুদ্ধে আপত্তি : নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট এবং নির্ধারিত পদ্ধতি ও সময়ে পেশকৃত লিখিত দরখাস্ত ব্যতীত অন্য কোনো প্রকারে এই আইনের অধীন ধার্য কোনো কর, রেইট, টোল বা ফি বা এতৎসংক্রান্ত কোনো সম্পত্তির মূল্যায়ন অথবা কোনো ব্যক্তির উহা প্রদানের দায়িত্ব সম্পর্কে কোনো আপত্তি উত্থাপন করা যাবে না ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জেলার সকল আর্থিক কর্মকাণ্ড নির্ভর করে অর্থ ব্যবস্থাপনার ওপর।
জেলার আয়ের উৎস নির্ধারণ করে সেখান থেকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অর্থ আয় করতে হয়। আবার ব্যয়ের সঠিক খাত নির্ধারণ করে উপযুক্ত স্থানে ব্যয় করতে হয়। আয়ব্যয়ের এ যথাযথ হিসাবের জন্য বাজেট প্রস্তুত করতে হয় ।
বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে কি না সেটা জানার জন্য প্রয়োজন নিরীক্ষা বিভাগ। এ সবকিছু নিয়েই জেলার অর্থ ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়।