বিশ্বকাপ খেলোয়ারদের কত টাকা এবং কী কী পুরষ্কার দেওয়া হয়

বিশ্বকাপ খেলোয়ারদের কত টাকা এবং কী কী পুরষ্কার দেওয়া হয় - আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর হল ফিফা বিশ্বকাপ। কোন দল ফুটবলে সবার সেরা তার স্বীকৃতি উঠে আসে বিশ্বকাপের এই মঞ্চে। বিশ্বকাপ জয়ী দলকে দেয় হয়ে থাকে ছয় কেজি সোন দিয়ে তৈরী এই মূল্যবান ট্রফি।
বিশ্বকাপ খেলোয়ারদের কত টাকা এবং কী কী পুরষ্কার দেওয়া হয়

তবে বিশ্বকাপ শুধু জাতীয় দল গুলোর জন্যই নয়, খেলোয়ারদের ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব বিচারেরও সর্বোচ্চ আসর। সেজন্য বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট শেষে খেলোয়ারদের দেওয়া হয় গোল্ডেন বল, গোল্ডেন বুট এবং গোল্ডেন গ্লাভের মত সম্মাননা। 

একজন ফুটবলারের জীবনে বিশ্বকাপ জেতার চেয়ে বড় পুরষ্কার আর কিছুই হতে পারে না। এই আইকনিক ট্রফির আড়ালে বিশ্বকাপের আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুরষ্কার ঢাকা পড়ে যায়। সেকারণে আমরা অনেকেই সেইসব পুরষ্কার সম্পর্কে তেমন খোঁজখবরও রাখি না। 

বিশ্বকাপ ট্রফি ছাড়াও, বিশ্বকাপ আসরে আর কী কী পুরষ্কার দেওয়া হয়, এবং বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী একেকটি দল কত টাকা পায়, সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে আজকের এই ব্লগে।

বিশ্বকাপ খেলোয়ারদের কত টাকা এবং কী কী পুরষ্কার দেওয়া হয় - ম্যান অব দ্যা ম্যাচ এওয়ার্ড

বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচের শেষে উক্ত ম্যাচের সেরা খেলোয়ারকে একটি ট্রফি প্রদান করা হয়। একে বলা হয় ম্যান অব দ্যা ম্যাচ এওয়ার্ড। 

এই পুরষ্কারের প্রচলন শুরু হয় ২০০২ সালে থেকে। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছে আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়ার লিওন মেসি। তিনি সর্বমোট ৮ বার এই পুরষ্কার পেয়েছেন। এরপরে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন পর্তুগালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তিনি মোট ৭ বার ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছেন।

এক আসরে সবচেয়ে বেশি রেকর্ডও আছে মেসির। শুধুমাত্র ম্যান অব দ্যা ম্যাচ পুরষ্কারটি প্রতিটি ম্যাচের শেষে দেওয়া হয়। আর বাকি সকল পুরষ্কার প্রদান করা হয় বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার পুরষ্কার বিতরনী আসরে।

গোল্ডেন বুট এওয়ার্ড

একটি বিশ্বকাপের সর্বচ্চো সংখ্যক গোলদাতাকে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়। গোল্ডেন বুট এওয়ার্ড একটি পরিসংখ্যানভিত্তিক ট্রফি। অর্থাৎ এই পুরষ্কার কে পাবে তার জন্য আলাদা করে কোন ভোটাভটি বা নির্বাচনের প্রকৃয়া নেই। যে বেশি গোল করবে এই এওয়ার্ড সেই পাবে। 

১৯৩০ সাল থেকে এই এওয়ার্ড দেওয়া শুরু হয়। অতীতে এই এওয়ার্ডের নাম ছিল গোল্ডেন সু, পরে গোল্ডেন বুটের নামকরণ করা হয়েছিল ২০১০ সালে।

গত বিশ্বকাপে সাত ম্যাচের ছয় গোল করে গোল্ডেন বুট পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের প্লেয়ার হ্যারি কেন

গোল্ডেন বল এওয়ার্ড

একটি বিশ্বকাপ আসরের সবচেয়ে সেরা খেলোয়ারকে গোল্ডেন বল এওয়ার্ড দেওয়া হয়। বিশ্বকাপ আসরের প্রথম থেকেই গোল্ডেন বল পুরষ্কার দেওয়া হতো না।

১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ থেকে এই ট্রফির প্রচলণ শুরু হয়। ফিফা এক্সপাট প্যানেলের বিশেষ বিচার প্রকৃয়ার মাধ্যমে এই পুরষ্কারের জন্য যোগ্য খেলোয়ার নির্বাচন করা হয়। গোল্ডেন বলকে, গোল্ডেন বুট পুরষ্কারের চেয়েও বেশি সম্মানের বলে বিবেচনা করা হয়।

সাধারণত গোল্ডেন বল পুরষ্কার বিজয়ী সেই বছরের ব্যালন ডিয়ার এওয়ার্ডের জন্যও প্রথম সারিতে থাকেন। ব্যালন ডিয়ার হল ফ্রান্সের একটি ফুটবল ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে আয়োজিত ফুটবলে বার্ষিক এওয়ার্ড।

গোল্ডেন বলের পর তুলনামূলক কম প্যারফরমেন্স অনুযায়ী সিলভার বল, ব্রোঞ্জ বল এওয়ার্ডও দেওয়া হয়। 

গোল্ডেন গ্লাভ এওয়ার্ড

ফিফা বিশ্বকাপ আসরের সেরা গোলরক্ষকের জন্য গোল্ডেন গ্লাভ এওয়ার্ড প্রচলন করা হয়েছে। অতীতে এই পুরষ্কারটিও ছিল না। ১৯৯০ সালে আসর থেকে গোল্ডেন গ্লাভ পুরষ্কার প্রদান করা হচ্ছে।

পরিসংখ্যানভিত্তিক এবং এক্সপাট মতামত উভয়দিক বিবেচনা করে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়। সবচেয়ে সেরা গোল রক্ষক দায়িত্ব পালন করা খেলোয়ারকে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়। তবে কখনও কখনও একটি অসাধারণ গোল ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই এওয়ার্ড দেওয়া হতে পারে।

বেস্ট ইয়ং প্লেয়ার এওয়ার্ড

বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী ২১ বছরের কম বয়সি সবচেয়ে সেরা খেলোয়ারকে বেস্ট ইয়ং প্লেয়ার এওয়ার্ড প্রদাণ করা হয়। ২১ বছরের কম বয়সি যে খেলোয়ার সবচেয়ে বেশি গোল করেছে এবং যে সবচেয়ে বেশি এসিস্ট করেছে তাকেই এই পুরষ্কার দেওয়া হয়।

পুরষ্কারটি নতুন হলেও তরুন ফুটবলারদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এওয়ার্ড।

ফেয়ার প্লে ট্রফি

বিশ্বকাপ ফুটবলে যে দল সবচেয়ে শৃঙ্খলার পরিচয় দেয় বিশেষ করে তাদেরকে ফেয়ার প্লে ট্রফি প্রদান করা হয়। সাধারণত যে দলের খেলোয়ারেরা সবচেয়ে কম হলুদ এবং লাল কার্ড পায় তাদেরকে এই ট্রফির জন্য নির্বাচন করা হয়।

এছাড়াও এমন দলকে এই এওয়ার্ড দেওয়া হতে পারে, যারা খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অস্বাভাবিক ভালো প্যারফরমেন্স করে ম্যাচের মোর ঘুরিয়ে দিয়েছে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ থেকে ফেয়ার প্লে ট্রফি প্রচলন শুরু হয়।

মোস্ট এন্টারটেইনিং টিম এওয়ার্ড

ফুটবল বিশ্বকাপে যে দল সবচেয়ে বেশি গোল করে তাদেরকে মোস্ট এন্টারটেইনিং টিম এওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ থেকে মোস্ট এন্টারটেইনিং টিম এওয়ার্ডের প্রচলন করা হয়েছে। যদি দেখা যায় একাধিক দল সমান সংখ্যক গোল করেছে, তখন যাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে কম গোল গেয়েছে তারাই এই পুরষ্কার পায়।

তার মানে বিশ্বকাপে যে দল সবচেয়ে বেশি গোল করবে এবং নিজেরা সবচেয়ে কম গোল খাবে তারাই মোস্ট এন্টারটেইনিং টিম এওয়ার্ডের যোগ্য।

গোল অব দ্যা টুর্নামেন্ট এওয়ার্ড

২০০৬ সালের বিশ্বকাপ থেকে গোল অব দ্যা টুর্নামেন্ট এওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। এই এওয়ার্ড প্রচলনের পর থেকে মাত্র ৪টি বিশ্বকাপ আসর বসেছে। প্রতিটিতেই ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়েছে।

তবে সাধারণত দর্শকেরা যে গোলটাকে বিশ্বকাপের সেরা গোল হিসেবে ভোট দেয় সেই গোলদাতা গোল অব দ্যা টুর্নামেন্ট এওয়ার্ড পায়।
আরও দেখুনঃ ৬৪ জেলার নাম তালিকা সহ - বাংলা ও ইংরেজি

একেকটি দল কত টাকা পায়?

আয়োজকের দিক দিয়েই সবচেয়ে ব্যয়বহুল নয়, কাতার বিশ্বকাপ। খেলোয়ারদের জন্যও এই আসর বেশি অর্থ আয়ের সুযোগ নিয়ে এসেছে। কারণ এবারের বিশ্বকাপের প্রাইজ মানি অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

রাশিয়ায় আয়োজিত সর্বশেষ বিশ্বকাপের চেয়ে কাতার বিশ্বকাপে প্রাইজমানি বেড়েছে ৬০ লাখ ডলার। কাতার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা কোন দল যদি একটি ম্যাচও জিততে না পারে, তবুও শুধু অংশ নেওয়ার জন্যই, তারা পাবে ১২ লাখ ডলার। প্রতিটি দলের জন্যই এই পরিমাণ অর্থ বরাদ্ধ থাকবে।
আরও দেখুনঃ ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?
আসরে অংশগ্রহণকরা ৩২টি দলের মধ্যে প্যারফরমেন্সের দিক থেকে যারা শেষ ১৬তে থাকবে, অর্থাৎ ১৭ থেকে ৩২ টি দলেই ৯০ লাখ ডলার করে পাবে। এই দলগুলোর জন্য সবমিলয়ে ১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার বরাদ্ধ রাখা হয়েছে।

এরপর ৯ম থেকে ১৬ পর্যন্ত ৮টি দলের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এই দলগুলোর প্রত্যেকে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার করে পাবে। ৫ম থেকে ৮ স্থানে থাকা ৪টি দলের প্রত্যেকটি দল পাবে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সবমিলিয়ে তাদের জন্য বরাদ্দ ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

এবারের বিশ্বকাপের ৪র্থ দল পাবে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং তয় স্থান অর্জনকারী দল পাবে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

কাতার বিশ্বকাপের রানার্স আপ দল পাবে ৩ কোটি ডলার এবং ২০২২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেই সাথে তাদেরকে সম্মানসূচক বিশ্বকাপের মূল ট্রফিটি দেওয়া হবে। তবে এই ট্রফি একেবারে দিয়ে দেওয়া হবে না। বিশ্বকাপ জয়ী দল পরবর্তী বিশ্বকাপ পর্যন্ত ট্রফিটি তাদের কাছে রাখতে পারবে। 

এর পরের বিশ্বকাপের সময় ট্রফিটি আবরও ফিফার কাছে জমা দিতে হবে। তখন ফিফা বিগত চ্যাম্পিয়ন দলকে সোনার প্রলেপ দেওয়া একটি নকল বিশ্বকাপ প্রদান করবে। তবে অতীতে নিয়ম ছিল কোন দল তিনবার বিশ্বকাপ জিতলে ট্রফিটি তাদেরকে চিরতরে দিয়ে দেওয়া হতো।
আরও দেখুণঃ ওজন কমানোর উপায় - ছেলে মেয়ে উভয়েরই
সেই হিসেবে ব্রাজিলকে এর আগের বিশ্বকাপটি একবারে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দূরভাগ্যের বিষয় হল ট্রফিটি ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফ্রেডারেশন থেকে চুরি হয়ে গেছে।

সর্বশেষ কিছু কথা

বিশ্বকাপ খেলোয়ারদের কত টাকা এবং কী কী পুরষ্কার দেওয়া হয় - এই বিষয়ে কিছুটা হলেও আপনাদের ধারণা দিতে পেরেছি। এছাড়াও বিশ্বকাপে কোন দল কত টাকা পেল সে বিষয়ে জানতে পেরেছেন। এই ব্লগটি পুরোটা পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। যদি আপনাদের এই ব্লগের উপর কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আশা করি উত্তর পাবেন। এছাড়াও আপনাকে যদি কোন ব্লগ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে কমেন্ট করুন। আমরা আপনাদের সেই ব্লগ সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবো।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url