তথ্যপূর্ণ: কম্পিউটার কি? কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা

কম্পিউটার কি - আজকের ডিজিটাল যুগে কম্পিউটার আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এবং আমাদের জীবনযাপন, কাজ এবং যোগাযোগের পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে কম্পিউটার কি? কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আলোচনা করবো। এছাড়াও তাদের সংজ্ঞা, উপাদান, প্রকার, কার্যকারিতা, সুবিধা, সীমাবদ্ধতা এবং ভবিষ্যতের প্রবণতাগুলি জানবো।
কম্পিউটার কি? কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা

কম্পিউটার কি ? - What is computer

কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র। গ্রীক শব্দ Compute থেকে Computer শব্দের উৎপত্তি। Compute অর্থ গণনা করা এবং Computer শব্দের অর্থ গণনাকারী। তবে যে যন্ত্র মানুষের দেয়া যুক্তিসংগত তথ্য ও নির্দেশের ভিত্তিতে অতি দ্রুত ও নির্ভুল ফলাফল দেয় তাকে কম্পিউটার বলা হয়। 

কম্পিউটার একটি গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে তৈরী হলেও এর সাহায্যে খুব সহজে এবং অল্প সময়ে প্রচুর তথ্য সম্বলিত গাণিতিক হিসাবসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করা যায়। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে না। অফিস, বাসা, ব্যাংক, রেলওয়ে, বিমান, যোগাযোগ, প্রিন্টিং-পাবলিকেশন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন, গবেষণা, প্রতিরক্ষা এবং ব্যবসা-বানিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমারলোড ব্লগের আপডেট পেতে 👉🔯Google News👈 Follow করুন

কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেন ? - Who invented the computer?

কম্পিউটার একজনে আবিষ্কার করেননি। যুগে যুগে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের চেষ্টা ও সাধনার ফলে আধুনিক কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রথম আবিষ্কৃত গণনাকারী যন্ত্রের ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে চীনাদের তৈরী এ্যাবাকাস নামক গণনাকারী যন্ত্রটিই প্রথম গণনাকারী যন্ত্র, যাকে কম্পিউটারের পূর্বপুরুষ বলা হয়। আধুনিক কম্পিউটারের মৌলিক রুপরেখা তৈরী করেন বৃটিশ গণিত বিশারদ চার্লস ব্যাবেজ

কম্পিউটারের শ্রেণী বিভাগ - Categories of computers

তথ্য প্রক্রিয়া করণের দিক থেকে Computer কে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১) এনালগ কম্পিউটার (Analog Computer) - এ্যনালক কম্পিউটার এমন একটি কম্পিউটার যাহা বস্তুর ভৌত পরিবর্তন (Physical value) কে পরিমাপ করে। তাপমান যন্ত্র, গতি মাপার যন্ত্র ইত্যাদি।
২) ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer) - ডিজিটাল কম্পিউটার এমন একটি কম্পিউটার যাহা Binary digit (বাইনারী ডিজিট) ‘0’ এবং ‘1’ কে গণনা করে কাজ করে থাকে। এই ধরনের কম্পিউটার Mathematical Logical কাজও করতে পারে।
৩) হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer) - হাইব্রিড কম্পিউটার বা মিশ্র পদ্ধতির কম্পিউটার এমন একটি কম্পিউটার যেখানে এ্যনালগ এবং ডিজিটাল উভয় কম্পিউটার এর মিলিত Feature থাকে। বেশির ভাগ হাইব্রিড কম্পিউটারকে মানুষের পরিবর্তে ডিজিটাল কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রন করা হয়।

ধারণ ক্ষমতা ও আকারের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারের শ্রেণীবিভাগ

ধারণ ও আকারের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার কে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১) সুপার কম্পিউটার (Super Computer) - সুপার কম্পিউটার হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন কম্পিউটার এটি মূলত Multi User System Computer. এতে প্রায় ২০০ শত Terminal লাগানো যায় এবং ২০০ জন User একই সময়ে এই কম্পিউটারে কাজ করতে পারে। Super Computer জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষনার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
২) মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer) - মেইনফ্রেম কম্পিউটার একটি দ্রুতগতি সম্পন্ন কম্পিউটার। তবে এর গতি ও কর্মক্ষমতা সুপার কম্পিউটারের তুলনায় কম। এটি Multi User System Computer এতে প্রায় ৮০টির মত Terminal লাগানো যায় এবং ৮০ জন User একই সময়ে এই কম্পিউটারে কাজ করতে পারে।
৩) মিনি কম্পিউটার (Mini Computer) - মিনি কম্পিউটার একটি Multi User System Computer এতে প্রায় ১৪টির মত Terminal লাগানো যায় এবং ১৪ জন User একই সময়ে এই কম্পিউটারে কাজ করতে পারে।
৪) মাইক্রো কম্পিউটার (Micro Computer) - মাইক্রো কম্পিউটার হচ্ছে একটি Single User System কম্পিউটার। অর্থাৎ একটি Computer এ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি কাজ করতে পারবে।

কম্পিউটারের ব্যবহার

কম্পিউটার এমন একটি উপকরণ যা ডাটা প্রক্রিয়া করে তার সাথে বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন করে থাকে। এটি মানুষের জন্য একটি শক্তিশালী টুল হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে যা আধুনিক জীবনে অবিভাজ্য অংশ হয়ে গিয়েছে।

কম্পিউটার ব্যবহারের অনেক উদাহরণ আছে, যেমন ডাটা প্রসেসিং, ইন্টারনেট সার্চ, ইমেল প্রেরণ, সামাজিক যোগাযোগ, অফিস কাজ, গেম খেলা, এবং বিভিন্ন প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট সম্প্রসারণ।

কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য কিছু বেসিক ধারণা প্রয়োজন। যেমন- কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম চালানো, অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা, ফাইল ও ফোল্ডার ব্যবস্থাপনা, ইন্টারনেট সার্ফিং এবং সুরক্ষা এগুলো প্রথম সারির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি।

সাধারণভাবে, কম্পিউটারের ব্যবহার বেশিরভাগে মাউস এবং কিবোর্ডের মাধ্যমে করা হয়, যা ব্যবহারকারীকে ইন্টারফেস প্রদান করে। এছাড়াও, কম্পিউটার এক্সেসের জন্য টাচস্ক্রিন, পেন ট্যাবলেট, স্পিচ রিকগনিশন এবং অন্যান্য ইনপুট ডিভাইসগুলির ব্যবহার করা হয়।

কম্পিউটার ব্যবহারের সাথে সাথে আমরা ডিজিটাল বিশ্বের অংশ হয়ে উঠেছি। সেই সাথে সুবিধাজনক ফল হিসেবে, বিশ্বকে সংক্ষেপ্ত হয়ে গিয়েছে। তবে, কম্পিউটারের ব্যবহার করার সময় সুরক্ষা এবং ব্যক্তিগত তথ্যের মেধা সুনিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

এই সময়ে, বিভিন্ন প্রগ্রাম ও এপ্লিকেশনের মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবহার সহজ হয়ে গিয়েছে, যার মধ্যে ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, বিনোদন, ক্রিয়েটিভিটি, ব্যবসায় পরিচালনা এবং এই সাথে সাথে একটি প্রয়োজনীয় সাধারণ জীবনের অংশ হিসেবে স্থায়ী হয়ে গিয়েছে।

কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য অনেকগুলি রয়েছে, যা তার উদ্দেশ্য এবং কাজের জন্য এটি অনুমোদিত করে। নিম্নলিখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

১. গণনাশীলতা: কম্পিউটার একটি শক্তিশালী গণনাশীল যন্ত্র, যা সম্পূর্ণ এবং অসীম সংখ্যক গণনা করতে সক্ষম।
২. তাজগতি: কম্পিউটার খুব তাজগতিশীল, যা প্রোগ্রামের অনুসারে ব্যক্তিগত কাজ সম্পাদন করতে পারে।
৩. মেমোরি: কম্পিউটারের মেমোরি দ্বারা তথ্য সংরক্ষণ এবং অ্যাক্সেস করা হয়। এটি কম্পিউটারের পূর্ব অবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ইনপুট ডিভাইস: কম্পিউটার ইনপুট ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর তথ্য প্রবেশ করায়। উদাহরণস্বরূপ কীবোর্ড এবং মাউস।
৫. আউটপুট ডিভাইস: কম্পিউটার আউটপুট ডিভাইস ব্যবহার করে তথ্য প্রদর্শন করে ব্যবহারকারীর জন্য। উদাহরণস্বরূপ মনিটর এবং প্রিন্টার।
৬. স্টোরেজ ডিভাইস: কম্পিউটারের স্টোরেজ ডিভাইস তথ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার হয়, যা স্থায়ী বা অস্থায়ী সংখ্যাচিত্রে তথ্য সংরক্ষণ করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ হার্ড ডিস্ক এবং সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD)।
৭. মাল্টিটাস্কিং: কম্পিউটার একবারে একাধিক কাজ সম্পাদন করতে পারে, এটি মাল্টিটাস্কিং করতে সক্ষম।
৮. নেটওয়ার্ক সমর্থন: কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করে ব্যবহারকারীর মধ্যে তথ্য প্রদান এবং প্রাপ্তি করতে পারে।
৯. বাস্তব সময় সাপোর্ট: কম্পিউটার বাস্তব সময়ে তথ্য প্রসেস করতে সক্ষম, যা ব্যবহারকারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১০. কম্প্যাটিবিলিটি: কম্পিউটার বিভিন্ন সফ্টওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার সঙ্গে সমন্বয় করার সক্ষম, যা ব্যবহারকারীদের সহজতর করে তাদের পছন্দমত সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে পারে।

এগুলি মিলায় একটি কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার পরিচালনা করতে সক্ষম।

প্রশ্ন

১. কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেন?
উত্তর: কম্পিউটারের আবিষ্কারক হিসেবে প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন চার্লস ব্যাবেজ

২. কম্পিউটার কি কি নিয়ে গঠিত?
উত্তর: কম্পিউটার গঠিত হয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মাধ্যমে, যা একত্রিত করে তথ্য প্রক্রিয়া করার ক্ষমতা প্রয়োগ করে। কম্পিউটারের মৌলিক গঠনের কিছু প্রধান উপাদান নিম্নরূপ:

প্রসেসর (Processor): এটি মনে করুন কম্পিউটারের "মস্তিষ্ক" বা কম্পিউটারের মৌলিক অংশ। প্রসেসর কম্পিউটারের সমস্ত গণনা, কার্যক্রম এবং নির্দেশাবলী পরিচালনা করে। এটি বিভিন্ন অংশের তথ্য প্রক্রিয়া করে। সেই সাথে পরিষ্কার কার্যক্ষমতা সম্পাদন করে।

মেমোরি (Memory): মেমোরি কম্পিউটারের তথ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার হয়। এটি কম্পিউটারের সকল তথ্য স্থায়ীভাবে বা অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে। অস্থায়ী মেমোরি হলে, তথ্য কেবলমাত্র স্মৃতিতে রাখা থাকে যতক্ষণ প্রসেসর এবং তথ্য প্রক্রিয়া চলছে। স্থায়ী মেমোরি হলে, তথ্য স্থায়ীভাবে রাখা থাকে, যাতে পুনরায় ব্যবহার করা যায়।

ইনপুট ডিভাইস (Input Device): ইনপুট ডিভাইস ব্যবহার করে তথ্য কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হয়। ইনপুট ডিভাইসের উদাহরণ হতে পারে কীবোর্ড (Keyboard), মাউস (Mouse), ট্র্যাকপ্যাড (Trackpad), স্ক্যানার (Scanner) ইত্যাদি।

আউটপুট ডিভাইস (Output Device): আউটপুট ডিভাইস ব্যবহার করে কম্পিউটার থেকে তথ্য প্রদর্শন করা হয়। উদাহরণ হতে মনিটর (Monitor), প্রিন্টার (Printer), স্পিকার (Speaker) ইত্যাদি।

স্টোরেজ ডিভাইস (Storage Device): স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহার করে কম্পিউটারের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এটি অনেক বড় এবং স্থায়ী তথ্য সংরক্ষণের সুবিধা দেয়। উদাহরণ হতে হার্ড ডিস্ক (Hard Disk), সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD), পেন ড্রাইভ (Pen Drive) ইত্যাদি।

এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি একসাথে কাজ করে কম্পিউটার সকল কাজ সম্পাদন করে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ করে। মানব জীবনে কম্পিউটারের ব্যবহারের ফলে অসংখ্য ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।

৩. প্রথম আবিষ্কৃত কম্পিউটারের নাম কি?
উত্তর: প্রথম আবিষ্কৃত কম্পিউটারের নাম ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer) বা ইলেকট্রনিক নিউমেরিক্যাল ইন্টিগ্রেটর এবং কম্পিউটার। এটি ১৯৪৫ সালে প্রস্তুত করা হয়েছিল। ENIAC বিশ্বের প্রথম সম্পূর্ণ ডিজিটাল ইলেকট্রনিক কম্পিউটার ছিল। এটি মার্ক-১ নামেও পরিচিত ছিল। এটি গণনা করার জন্য ব্যবহার করা যেত। ENIAC এর উদ্ভাবনী জোন প্রেসপার্কিন্স এবং জন মৌচলি এরকিনস ছিলেন।

শেষ কথা

কম্পিউটার কি? কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আজকে আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে।আমরা কম্পিউটারের প্রাচীন ইতিহাস থেকে আধুনিক যুগের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে যদি আপনাদের কোথাও বুঝতে অসুবিধা হয়ে থাকে। তাহলে আর্টিকেলটি পুনরায় আবার পড়ুন। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আর কোথাও যদি আপনাদের ব্লগটি ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার ও কমেন্ট করতে ভুলবেন না।


Related Post-
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url