গ্রামীণ উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা আলোচনা কর



গ্রামীণ উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা আলোচনা কর
গ্রামীণ উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা আলোচনা কর

গ্রামীণ উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা আলোচনা কর

  • অথবা, গ্রামীণ উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা বর্ণনা কর। 
  • অথবা, গ্রামীণ উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের কার্যাবলি বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্থানীয় সরকার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। একটি রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সমানভাবে দেশের সর্বত্র শাসন ক্ষমতা পরিচালনা এবং রাষ্ট্রীয় সেবা দান সম্ভব হয় না। 

এজন্য একটি রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি দেশটিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে ভাগ করে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের গ্রাম উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

• গ্রামীণ উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা : নিয়ে গ্রামীণ উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা বর্ণনা করা হলো : 

১. বিচারকার্য পরিচালনা : স্থানীয় সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সরকার বিচারকার্য পরিচালনার মাধ্যমে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। 

গ্রাম্য ছোটখাটো স্বশ্বসংঘাত, কোন্দল ইত্যাদি মীমাংসা করার মাধ্যমে মামলামোকদ্দমার হয়রানি বন্ধ হয়ে থাকে। ফলে গ্রামীণ পরিবেশে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষিত হয়।

২. কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন : বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে স্থানীয় সরকার কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। মাঠ পর্যায়ে সার, উন্নতমানের বীজ এবং কীটনাশক সরবরাহ, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছে এবং কোনো সমস্যা দেখা দিলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট প্রদান করে স্থানীয় সরকার কৃষি উন্নয়নে জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

৩. সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে : সমাজের অনগ্রসর অংশে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অগ্রসরমান করার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে স্থানীয় সরকার। প্রশাসনে নেতৃত্ব প্রদানকারীরা সাধারণ জনগোষ্ঠী থেকে অধিক শিক্ষিত ও সচেতন হয়ে থাকেন। 

তারা শিক্ষা ও সচেতনতার গুণাবলি দ্বারা গ্রামীণ জনগণকে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সচেতনতা দান করে থাকে।

৪. শিক্ষা উন্নয়নে ভূমিকা : স্থানীয় সরকার শিক্ষা উন্নয়নেও ভূমিকা পালন করে থাকে। গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বই ও বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থাসহ শিক্ষার উন্নতিকল্পে পাঠাগার ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, বয়স্ক ও নিরক্ষরদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা স্থানীয় সরকারের কাজ। 

তাছাড়া বর্তমান সরকারের গণশিক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার তদারকিমূলক ভূমিকা পালন করে।

৫. সেবা ও পুনর্বাসনমূলক কাজ : অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, ঝড়, শিলাবৃদ্ধি, ভূমিকম্প প্রভৃতি পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে স্থানীয় সরকার ত্রাণকার্য পরিচালনা করে থাকে। 

আবার বিধবা ও অন্যান্য শ্রেণির অসহায় ব্যক্তিদের জীবন রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার কাজে স্থানীয় সরকার ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা : স্থানীয় সরকার জনগণের স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ জাতি গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। 

রোগবালাই মহামারি আকার ধারণ করলে স্থানীয় সরকার চিকিৎসা সেবা" নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। 

তাছাড়া স্বাস্থ্য সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা, টিকাদান কর্মসূচির বাস্তবায়ন, স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা প্রভৃতি কাজ স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

৭. পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন : দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার যে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তার সফল বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা অত্যধিক। 

কারণ বিপুল জনসংখ্যার মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম সম্পর্কে যেসব ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কার রয়েছে তা দূর করে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. জনকল্যাণমূলক কাজ : জনকল্যাণ নিশ্চিতকরণের জন্য স্থানীয় সরকারের কতিপয় ভূমিকা রয়েছে। যেমন— খেলাধুলার জন্য মাঠ নির্মাণ ও সংরক্ষণ, বিনোদনের জন্য পার্ক নির্মাণ ও তত্ত্বাবধান, কবরস্থান ও শ্মশান নির্মাণ ও সংরক্ষণ, রাস্তাঘাটে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা, পানি সরবরাহের জন্য কূপ, নলকূপ, পুকুর তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি। জনকল্যাণমূলক কাজের অন্তর্গত 1

৯. অর্থনৈতিক কার্যাবলি : স্থানীয় সরকার আর্থিক প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ কর, রেট, ফি ধার্য ও আদায় করতে পারে। ছোট ছোট জলাশয় ও ফেরিঘাট লিজ প্রদানের এক্তিয়ারও স্থানীয় সরকারের ওপর ন্যস্ত। 

নিজস্ব দায়িত্ব ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি রাজস্ব আদায় ও সাধারণ প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করে থাকে।

১০. প্রতিবেদন পেশ : স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহ নিজ নিজ বিষয়ে পরিসংখ্যানমূলক প্রতিবেদন পেশ করে। জন্মহার, মৃত্যুহার, বিয়ে, তালাক, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষাব্যবস্থা, কৃষি, স্বাস্থ্য, সর্বোপরি তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।

১১. আধুনিকায়ন : স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃত্বে থাকা মানুষগুলো অধিকতর শিক্ষিত ও অগ্রসরমান। তারা অধিকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে অভ্যস্ত। 

এভাবে গ্রামীণ নেতৃত্ব দ্বারা আধুনিকতার ধারা প্রবাহিত হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আধুনিকায়নের সুবাতাস যখন গ্রামাঞ্চলে প্রবাহিত হয় তখন গ্রাম সব দিক দিয়ে উন্নতির চরম শিখরের দিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে।

১২. যুবসমাজের উন্নয়ন : যুবসমাজ যাতে মাদকসেবনসহ অপরাধে জড়িত না হয় সেজন্য এসবের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা, দেশপ্রেম, সমাজ ও দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে স্থানীয় সরকার। সরকার তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠন এবং কর্মীদের মাধ্যমে এসব কাজ বাস্তবায়ন করে।

১৩. বিনোদনমূলক কাজ : স্থানীয় পর্যায়ে চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা স্থানীয় সরকারের কাজ। যেমন— মেলা ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা, জাতীয় উৎসব পালন, খেলাধুলা, গানবাজনা প্রভৃতিতে স্থানীয় সরকার ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে।  

১৪. সমাজসেবামূলক কাজ : স্থানীয় সরকার গ্রামীণ উন্নয়নে সমাজসেবামূলক অনেক কার্যসম্পাদন করে থাকে। সমাজসেবামূলক কাজগুলো হলো স্কুলকলেজ প্রতিষ্ঠা, শিশুকল্যাণের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা, মাতৃসদন এবং শিশুসদন -প্রতিষ্ঠা ও তার রক্ষণাবেক্ষণ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপন, বৃদ্ধ ও অনাথ শিশুদের সাহায্য করা ইত্যাদি ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে স্থানীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে গ্রাম পর্যায়ে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। 

তাই এক্ষেত্রে গ্রামের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আর এজন্যই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url