সরকারি ও বেসরকারি অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর

সরকারি ও বেসরকারি অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর
সরকারি ও বেসরকারি অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর

সরকারি ও বেসরকারি অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর

  • অথবা, সরকারি ও বেসরকারি অর্থব্যবস্থার বৈসাদৃশ্যসমূহ পর্যালোচনা কর ।
  • অথবা, সরকারি ও বেসরকারি অর্থব্যবস্থার অমিলসমূহ লেখ।

উত্তর : ভূমিকা : অর্থব্যবস্থা হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অর্থব্যবস্থা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

সরকারি অর্থব্যবস্থা হলো এমন এক অর্থব্যবস্থা যা সরকার ও গণপ্রতিষ্ঠানসমূহের আয়ব্যয়সংক্রান্ত নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা করে। 

অন্যদিকে, বেসরকারি বা ব্যক্তিগত অর্থব্যবস্থা হলো ব্যক্তি ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানসমূহের আয়ব্যয়সংক্রান্ত নীতিমালা সম্পর্কিত আলোচনা ।

● সরকারি ও বেসরকারি অর্থব্যবস্থার পার্থক্য : নিম্নে সরকারি ও বেসরকারি অর্থব্যবস্থার পার্থক্য আলোচনা করা হলো : 

১. সময়সীমা : সরকার সাধারণত দেশের আয়ব্যয়ের হিসাব এক বছরের জন্য করে। প্রত্যেক বছর সরকার আয় ও ব্যয়ের খতিয়ান প্রস্তুত করে বাজেট প্রণয়ন করে এবং সে অনুযায়ী সরকারি অর্থব্যবস্থা পরিচালিত হয়। পক্ষান্তরে, কোনো ব্যক্তি সাধারণত এক মাসের ভিত্তিতে তার আয়ব্যয়ের হিসাব তৈরি করে ।

২. ভবিষ্যতের চিন্তা : বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যৎ অপেক্ষা বর্তমানকে অধিক প্রাধান্য দেয় । সে এমনভাবে অর্থ ব্যয় করে যেন বর্তমানেই তার ফল ভোগ করতে পারে। 

কিন্তু সরকারি অর্থব্যবস্থায় বর্তমান অপেক্ষা ভবিষ্যতকেই অধিক প্রাধান্য "দেওয়া হয় । সরকার দেশের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থের দিকে লক্ষ রেখেই ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করে।

৩. ঋণের ভার : ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঋণের ভার সবসময় ব্যক্তিকেই প্রত্যক্ষভাবে বহন করতে হয়। কিন্তু সরকার করারোপের মাধ্যমে ঋণের টাকা জনসাধারণের নিকট হতে সংগ্রহ করে। ফলে সরকার প্রত্যক্ষভাবে ঋণের ভার বহন করে না। 

৪. ঋণের উৎস : সরকার প্রয়োজনের সময় দেশের ভিতর ও দেশের বাহির হতে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বিদেশ হতে ঋণ গ্রহণ করতে পারে না, সে কেবল দেশের ভিতর থেকেই ঋণ নিতে পারে ।

৫. আয়ব্যয়ের লক্ষ্য : ব্যক্তিগত আয়ব্যয়ের লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন ও ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা, কিন্তু সরকারি আয়ব্যয়ের লক্ষ্য হলো সমাজের কল্যাণসাধন করা। বস্তুত সর্বাধিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণসাধন করাই হলো সরকারি অর্থব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ।

৬. আয়ের স্থিতিস্থাপকতা : সরকারের আয়ের উৎস স্থিতিস্থাপক। সরকার প্রয়োজনবোধে বিভিন্ন উৎস হতে অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করতে পারে; কিন্তু কোনো ব্যক্তি ইচ্ছে করলে তার আয় বৃদ্ধি করতে পারে না। ব্যক্তির ক্ষেত্রে আয়ের উৎস কম স্থিতিস্থাপক হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সরকারি ও বেসরকারি বা ব্যক্তিগত অর্থব্যবস্থা এক নয়; বরং ভিন্ন প্রকৃতির। উল্লিখিত ক্ষেত্রসমূহে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষণীয়। 

সরকারি ও বেসরকারি অর্থব্যবস্থায় আয়, ব্যয়, বিনিয়োগ, উৎপাদন, মূলধন ও সঞ্চয় পরিচালনা ও পরিকল্পনা ইত্যাদিতে ভিন্নতা ও অভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url