জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি আলোচনা কর

জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি আলোচনা কর
জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি আলোচনা কর

জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি আলোচনা কর

  • অথবা, জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ণনা কর ।
  • অথবা, জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সম্পর্কে যা জান লেখ।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দিক থেকে অঞ্চলভিত্তিক প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ একক। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সব কলাকৌশল ও প্রক্রিয়া কেন্দ্রীভূত হয়। 

এ উপমহাদেশে জেলা প্রশাসনের প্রথম ভিত্তি রচনা করেছিলেন মুঘল সম্রাট আকবর। জেলাকে অঞ্চলভিত্তিক একক হিসেবে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট মনে করা হয় । জেলা প্রশাসন কোনো স্থিতিশীল সংগঠন নয়; বরং এটি একটি গতিশীল সংগঠন।

জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্য : প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। তেমনি জেলা প্রশাসনেরও নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিদ্যমান যা নিম্নরূপ :

১. আইনশৃঙ্খলা রক্ষা জেলা প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য। ব্যক্তিজীবনের নিরাপত্তা, তাদের সম্পত্তির নিরাপত্তা নির্ভর করে আইনশৃঙ্খলা সংরক্ষণের ওপর ।

২. জেলার ভূমি, রাজস্ব ও অন্যান্য কর নির্ধারণ এবং সকল প্রকার কর আদায় জেলা প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য। ৩. জেলার জনসাধারণের আর্থসামাজিক অগ্রগতি সাধন।

৪. ভূমি ক্রয়-বিক্রয়, ভূমিসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি ও ভূমিহীনদের মাঝে ভূমি বণ্টন।

জেলা প্রশাসনের কার্যাবলি : জেলা প্রশাসনের কার্যাবলি নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. উন্নয়নমূলক কাজ : জেলা প্রশাসন সব উন্নয়নমূলক কাজের জন্য দায়ী। পরিকল্পনাপ্রসূত পরিবর্তন আনার জন্য সব দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের ওপর ন্যস্ত থাকে। 

জেলা প্রশাসককে সকল প্রকার উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় উদ্যোগ গ্রহণ, অনুপ্রেরণা সঞ্চার ও নেতৃত্ব প্রদান করতে হচ্ছে। 

রাস্তাঘাট নির্মাণ, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মসূচি, সেচ পরিকল্পনা, হাঁস-মুরগির খামার, জনস্বাস্থ্য পরিকল্পনা, টেলিফোন অফিস স্থাপন, স্কুলকলেজ স্থাপন সবকিছুই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়েই করতে হবে। 

জনগণের ভিতরে জনসচেতনতা জাগিয়ে তোলা জেলা প্রশাসকের অন্যতম প্রধান কাজ। এছাড়া যেকোনো পরিকল্পনা কাঠামো প্রণয়নে তিনি সহযোগিতা করে থাকেন।

২. আইনশৃঙ্খলা রক্ষা : জেলা হলো ফৌজদারি প্রশাসনের মৌলিক একক। জেলা প্রশাসকরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আইনশৃঙ্খলা সংরক্ষণের দায়িত্ব বা কর্তৃত্ব তার ওপর ন্যস্ত থাকে। তিনি হলেন জেলার ফৌজদারি প্রশাসনপ্রধান। আইনশৃঙ্খলার প্রধানত দুটি দিক রয়েছে; যথা : 

১. জনসাধারণের মধ্যে শান্তি রক্ষা করা এবং 

২. ফৌজদারি মামলার অনুসন্ধান ও বিচার। 

জেলার শান্ত পরিবেশ এবং আইনশৃঙ্খলার রক্ষা করতে না পারার জন্য তিনি দায়ী হবেন। এমনকি জেলার পুলিশ বাহিনীর সুষ্ঠু কর্তব্য সম্পাদনের দায়িত্বও তার ওপর বর্তায়।

৩. সমন্বয়মূলক কাজ : সমন্বয়মূলক কাজ জেলা প্রশাসকের একটি প্রাথমিক দায়িত্ব। জেলা প্রশাসক সব কার্য ও জাতি গঠন বিভাগের কাজ তত্ত্বাবধান করেন এবং সব বিভাগীয় কর্মচারীর কার্য সমান্তরালভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। 

এছাড়াও যেসব বিষয় জনকল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত সেসব বিষয়ে জেলার অন্যান্য কর্মকর্তার চেয়ে জেলা প্রশাসকের মতামত সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাধান্য পেয়ে থাকে ।

৪. রাজস্ব প্রশাসন : জেলা প্রশাসক জেলার রাজস্ব প্রশাসনের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করেন। এটি জেলা প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সনাতন কর্মগুলোর মধ্যে একটি। 

জেলার রাজস্বসংক্রান্ত সব কার্যক্রম অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার সম্পাদন করেন। অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনারকে সাহায্য করেন রাজস্ব ডেপুটি কালেক্টর। 

রাজস্ব ডেপুটি কালেক্টর হলেন তার নিকটস্থ কর্মকর্তা। এছাড়াও রয়েছেন প্রশাসক ম্যানেজার, থানা রাজস্ব অফিসার এবং নিম্নতম পর্যায়ের তহশিলদার। 

জেলা প্রশাসককে কালেক্টর হিসেবে নিম্নোক্ত কর্মসম্পাদন করতে হয়। যেমন—

ক. ভূমি রাজস্ব ও পানি করের কালেক্টর,

খ. ভূসম্পত্তির উন্নয়ন ও স্থায়িত্বের প্রস্তাবক,

গ. রাজস্বসংক্রান্ত মামলার বিচারক,

ঘ. কৃষ্টি পরিসংখ্যান রেকর্ডকারী,

ড. রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির অভিভাবক এবং 

চ. ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিকারের অভিভাবক ও নিয়ন্ত্রক।

৫. নির্বাচন ও জাতীয় দিবস পালন : স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সর্বোচ্চ দায়িত্বও জেলা প্রশাসক গ্রহণ করে থাকে। শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করে থাকেন। 

এছাড়াও তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন, যেমন- স্কুলকলেজ, হাসপাতাল, শিল্প ও কৃষি মেলা প্রদর্শনী, রাস্তাঘাট, পুল প্রভৃতি। 

এছাড়াও তিনি বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণী সভায় প্রধান অতিথির ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত ও আধাদ্বায়ত্তশাসিত সংস্থার চেয়ারম্যান কিংবা প্রেসিডেন্টের ভূমিকা পালন করেন।

৬. বিবিধ কার্যাবলি : বিবিধ কার্যাবলি বলতে সাধারণ এবং প্রশাসনিক বহুমুখী কাজকর্মকে বুঝায়। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ, বেসামরিক প্রতিরক্ষা, আদমশুমারি, রেশন ব্যবস্থা, সরকারি প্রচার, সমাজবিরোধী কার্যের বিরুদ্ধে অভিযান, জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কার্যের জন্য প্রচার এবং সমগ্র জেলার কল্যাণ এসবই ডেপুটি কমিশনারের সাধারণ ও বিবিধ কার্যের অন্তর্ভুক্ত।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জেলা প্রশাসক হলেন সরকারের মুখ্য প্রতিনিধি এবং জেলার সব বিষয়ের তত্ত্বাবধান, মূল্যায়ন প্রভৃতি সরকারকে অবহিত করার দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হয়। 

জেলা পর্যায়ে সরকারের সামগ্রিক রূপ হলো জেলা প্রশাসন। বর্তমানে থানা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে জেলা প্রশাসকের উন্নয়ন ও বিচার কাজের চাপ অনেকাংশে প্রশমিত হলেও পরিদর্শনমূলক দায়িত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url