কম্পিউটারের ইতিহাস (History of Computer)

কম্পিউটারের ইতিহাস (History of Computer) - কম্পিউটারের প্রজন্ম (Computer Generations) - কম্পিউটার কি (What is Computer)?
কম্পিউটারের ইতিহাস (History of Computer)

হাই প্রিয় বন্ধুরা,আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। টেকনিক্যাল এসইও কি (What is Technical SEO)? এই বিষয়গুলি নিয়ে আমি গতপর্বে পোস্টগুলোতে আলোচনা করেছি। আজকে আমরা জানবো কম্পিউটারের ইতিহাস (History of Computer)। তাহলে বন্ধুরা শুরু করা যাক।

কম্পিউটার কি (What is Computer)?

কম্পিউটার শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কম্পিউটার শব্দটি গ্রীক শব্দ থেকে এসেছে। Compute শব্দ থেকে Computer শব্দের উৎপত্তি। প্রাথমিক অবস্থায় এটি শুধু গণনার কাজে ব্যবহৃত হত। কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটার দিয়ে গাণিতিক, যুক্তি ও সিদ্ধান্তমূলক কাজ করা যায়। কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র, যার মধ্যে কোন ডাটা ইনপুট করলে নির্ভুল ফলাফল পেতে পারি।

অর্থ্যৎ যার মধ্যে দিয়ে গাণিতিক, যুক্তি, সিন্ধান্তমূক কোন ডাটা ইনপুট (Input) করলে সেটা Process হওয়ার পর আউটপুট (Output) হিসেবে পাওয়া যায়, তাকে কম্পিউটার বলে।

কম্পিউটারের ইতিহাস (History of Computer)

প্রাচীন কালে মানুষ নুড়ি, পাথর, হাতের আঙ্গুল, ঝিনুক, দড়ির গিঁট ইত্যাদি মাধ্যমে গণনা করতো। তবে কালের বিবর্তনে মানুষের ধ্যান-ধারণা চিন্তাশক্তি পরিবর্তনের কারণে ক্রমাগত গবেষণা ও উদ্ভাবনের ফল হল কম্পিউটার। গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে প্রথম “অ্যাবাকাস” নামক কম্পিউটার চীন দেশে তৈরি করা হয়। সময়ের বিবর্তনের পাশাপাশি কম্পিউটারের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়।

আধুনিক কম্পিউটারের রুপরেখা তৈরি করেন ব্রিটিশ গণিত “বিশারদ চার্লস ব্যাবেজ”। তিনি এই যন্ত্রে যাতে স্মৃতি ধরে রাখা যায় তার পরিকল্পনা করলেন। কিন্তু তার পারিবারিক কারণে তার প্রচেষ্ঠা সাফল্য অর্জন করতে পারেন নি। তবে তার পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় আজকের আধুনিক কম্পিউটার। তাই “চার্লস ব্যাবেজকে” আধুনিক যুগের কম্পিটারের জনক বলা হয়।

কম্পিউটারের প্রজন্ম (Computer Generations)

কম্পিউটার আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে প্রযুক্তির উন্নতি, কাজের অগ্রগতি এবং আকৃতিগত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এই পরিবর্তনের এক একটি ধাপকে প্রজন্ম বলে। পরিবর্তন বা বিবর্তনের অনেকগুলো ধাপ পার করে কম্পিউটার আজ বর্তমান অবস্থায় এসেছে। প্রযুক্তির উন্নয়ন কম্পিউটারকে উন্নত থেকে আরও উন্নতর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

কম্পিউটারের প্রজন্মগুলো হল:

  1. প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার (First Generation Computer) [১৯৪০-১৯৫৬]
  2. দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (Second Generation Computer) [১৯৫৭-১৯৬৩]
  3. তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (Third Generation Computer) [১৯৬৪-১৯৭০]
  4. চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার (Fourth Generation Computer) [১৯৭১ বর্তমান]
  5. পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার (Fifth Generation Computer)

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার (First Generation Computer) [১৯৪০-১৯৫৬]

ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হতো প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারে। তাতে হাজার হাজার ডায়োড,  (ডায়োড হলো থার্মায়োনিক ভালভ) ক্যাপাসিটর, রেজিস্টার ইত্যাদি ‍দিয়ে তৈরি হতো বলে এটি আকারে অনেক বড় ছিল। কয়েকটি ঘর জুড়ে থাকতো এই কম্পিউটার এবং চালু অবস্থায় ভীষণ গরম হয়ে যেতো। তাই না পুড়ে যাবার জন্য মাঝে মাঝে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা হতো। এগুলো ছিলো সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন এবং অত্যধিক বিদ্যুৎশক্তি প্রয়োজন হতো।

এ কম্পিউটার গুলো ব্যয়বহুল হলেও কম নির্ভরযোগ্য ছিল। কাজের গতি মন্থর। ১৯৪৩ সালে নির্মিত সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার হল ENIAC( Electronic Numerical Integrator and Calculator) কম্পিউটার। এটি তৈরি করেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার মূর স্কুল অব ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক জন মউসলী (John Mauchly) এবং তার প্রকৌশলীর জে প্রেসপার ইকার্ট (J. Presper Eckert)। 

১৯৪৩ সালে এ কম্পিউটারের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৪৫ সালে এর কাজ শেষ হয়। আটলান্টিক মহাসাগরের ওপারে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী  ক্ষেপণাস্ত্রের পথ পরিমাপের জন্য দ্রুতগতির হিসাব যন্ত্রের প্রয়োজন উপলব্ধি করে। লক্ষ্য স্থানে দূরত্বের উপর নির্ভর করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপণের কোণ পরিবর্তন করতে হয়। এজন্য ENIAC(Electronic Numerical Integrator And Calculator) কম্পিউটারের জন্ম হয় ।১৯৪৫ সালের শেষে বোস্টনে প্রথম আবির্ভূত হয় IBM-650। এটি ছিল এ প্রজন্মের ব্যাপকভাবে সমাদৃত কম্পিউটার।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য ঃ

  • ধীর গতিসম্পন্ন গণনাকারী যন্ত্র
  • আকারে অনেক বড়
  • ভ্যাকুয়াম টিউব ও বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক বর্তনী ব্যবহার
  • মেশিন ভাষার নির্দেশ প্রদান
  • পাঞ্চকার্ডের মাধ্যমে ইনপুট আউটপুট ব্যবস্থা করা হয়
  • মেমোরি হিসাবে ম্যাগনেটিক ড্রামের ব্যবহার।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (Second Generation Computer) [১৯৫৭-১৯৬৩]

১৯৪৮ সালে কয়েকজন বিজ্ঞানী আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরিতে ট্রানজিস্টর তৈরি করে ।এই ট্রানজিস্টর কম্পিউটার উন্নতির বিপ্লব এনে দেয়। এই প্রজন্মের ভ্যাকুয়াম টিউব এর পরিবর্তে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়। এই ট্রানজিস্টর আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে কম্পিউার এক নতুন সম্ভাবনার উম্মোচিত হয়। 

এই প্রজন্মের কম্পিউটার গরম হতো না। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার থেকে এটি আকারে ছোট এবং কম বিদ্যুৎ খরচ হয়। এই প্রজন্মের কম্পিউটারে প্রথম হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার শুরু হয়।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য ঃ

  • উচ্চ গতিসম্পন্ন ও উন্নত মানের ইনপুট আউটপুট ব্যবস্থার প্রচলন।
  • ট্রানজিস্টর এর ব্যবহার শুরু হয়।
  • মেশিন ভাষার পরিবর্তে উচ্চস্তরের ভাষার (যেমন:- COBOL, FORTRAN, ALGOL ইত্যাদি)ব্যবহার।
  • অধিক নির্ভরযোগ্যতা।
  • বাস্তবিক ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের শুরু।
  • ম্যাগনেটিক কোর মেমোরির ব্যবহার ও সহায়ক মেমোরি হিসেবে ম্যাগনেটিক ডিস্কের  উদ্ভাবন।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (Third Generation Computer) [১৯৬৪-১৯৭০]

এই প্রজন্মে বরার্ট নয়েস (Robert Noyce) ও জ্যাক কিলবি (Jack Kilby) প্রায় একই সময় পৃথকভাবে বড় সার্কিট ক্ষুদ্র করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ছোট সার্কিটকে আইসি (IC) বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (Integrated Circuit) বলা হয়। এই প্রজন্মে কম্পিউটারের IC ব্যবহার শুরু হয়। ফলে কম্পিউটার আকার ও দাম কমে যায়। তবে গতি বেড়ে যায়। 

এ প্রজন্মে মিনি কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়ে যায় এবং কম্পিউটারের সাথে মনিটর ব্যবহার শুর হয়। সাথে সাথে কম্পিউটারের স্মৃতি ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে ভাষার উন্নতিতে প্রোগ্রামে দক্ষতা অর্জন সহজতর অপারেটিং সিস্টেম এ প্রজন্মে কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়। এবং কম্পিউটারে প্রিন্টারের প্রচলন শুরু হয়।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য ঃ

  • মিনি কম্পিউটারের উদ্ভব।
  • উচ্চতর ভাষার বহুল ব্যবহার।
  • কম্পিউটারে একীভূত বর্তনীর প্রচলন।
  • মুদ্রিত আকারে লাইন প্রিন্টারের ব্যবহার।
  • অর্ধপরিবাহী স্মৃতির ব্যবহার।
  • আকৃতিতে ছোট, দাম কম এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি।
  • আউটপুট হিসেবে ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিটের প্রচলন।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার (Fourth Generation Computer) [১৯৭১ বর্তমান]

চতুর্থ প্রজন্ম ১৯৭১ সাল থেকে শুরু হয়েছে বলে ধরা হয়। LSI (Large Scale Integration) ও VLSI (Very Large Scale Integration) মাইক্রোপ্রসেসর এবং Semi-conductor Memory দিয়ে এ প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরি করা হয়। VLSI এর মাইক্রোপ্রসেসর নিয়ে গঠিত ছোট কম্পিউটারকে মাইক্রোকম্পিউটার বলা হয়।

১৯৮১ সালে আইবিএম কোম্পানি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রথম মাইক্রোকম্পিউটার তৈরি শুরু হয়। চতুর্থ প্রজন্ম থেকে মাইক্রোকম্পিউটার চালু হয়। ফলে কম্পিউটার ছোট হয়। তবে কম্পিউটারের গতি অত্যধিক বেড়ে যায়। এ প্রজন্মে কম্পিউটারের স্মৃতি উদ্ভাবিত হতে থাকে।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য ঃ

  • ডাটা ধারণ ক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি।
  • মানুষের কণ্ঠস্বর এর মাধ্যমে প্রদত্ত নির্দেশের অনুধাবন।
  • ট্রানজিস্টর গুলোতে অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার।
  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial  Intelligence) ব্যবহার।
  • সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন।
  • উন্নত মেমোরি তথা ম্যাগনেটিক বাবল মেমোরির ব্যবহার।
  • বহু মাইক্রোপ্রসেসর এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ বিশিষ্ট একীভূত বর্তনীর ব্যবহার।
  • অত্যান্ত শক্তিশালী ও উচ্চ গতি সম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এর ব্যবহার।

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার (Fifth Generation Computer)

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার হতে অধিক শক্তিশালী। এখানে Super VLSI (Very Large Scale Integration) চিপ ও অপটিক্যাল ফাইবারের সমন্বয়ে এই প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরি। এই ধরনের কম্পিউটার অত্যন্ত শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর ও প্রচুর পরিমাণ ডাটা ধারণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ করার গবেষণা চলছে।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার ছাড়াও পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার মানুষের কণ্ঠস্বর শনাক্ত করার ক্ষমতা ও কন্ঠে দেয়া নির্দেশ বুঝতে পেরে কাজ করার ক্ষমতা থাকবে। এই প্রজন্মের কম্পিউটারে নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার উন্নতি সাধিত হয়েছে।

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য ঃ

  • বিপুল শক্তি সম্পন্ন সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন।
  • কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন থাকবে।
  • প্রোগ্রাম সামগ্রীর উন্নতি ইত্যাদি।
  • অধিক সমৃদ্ধশালী মাইক্রোপ্রসেসর।
  • স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ গ্রহণযোগ্য শব্দ দিয়ে কম্পিউটারের সাথে সংযোগ।
  • তথ্য ধারণ ক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি।
  • চৌম্বক কোন স্মৃতির ব্যবহার।

আড়ও পড়ুনঃ

  1. SEO কি এবং কেন SEO গুরুত্বপূর্ণ?
  2. ফ্রীল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে করবো? ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?
  3. অফ-পেজ এসইও (off page SEO) কি? কিভাবে অফ-পেজ এসইও করতে হয়?

এই টপিক টি পুরোটা পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, এই টপিক এর ভিতর কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে আপনারা কমেন্ট করুন। আশা করি, উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ ‍Amarload.com এর সাথে থাকার জন্য।

About the Author

I am a web designer. I blogging regularly. I try to write this blog in my spare time. I would be grateful if you could master something from this blog of mine.
Lyrics Amarload I work for blogger practice and for the experience I work on this website…

Post a Comment

আমার পোস্ট পড়ে যদি ভালো লাগে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানাবেন, আর ভালো না লাগলে কোন বিষয়ে ভালো লাগে নাই তা বিস্তারিত লিখবেন, আশা করি উত্তর পাবেন।

All information presented on this website is collected from internet. We may make unintentional mistakes while writing the post. We sincerely apologize for any unpleasant mistakes and Amarload.Com is not responsible for any incorrect information. If you see any incorrect information please let us know immediately. We will try to fix it as soon as possible. Click here to report.

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.