বিশ্বগ্রাম (Global Village) কি? বিশ্বগ্রামের ধারণা এবং এর সুবিধা অসুবিধা?

বিশ্বগ্রাম (Global Village) কি - বিশ্বগ্রামের ধারণা এবং এর সুবিধা অসুবিধা - বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার প্রধান উপাদান সমূহ

হাই প্রিয় বন্ধুরা,আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি (What is virtual reality)? এই বিষয়গুলি নিয়ে আমি গতপর্বে পোস্টটিতে আলোচনা করেছি। আজকে আমরা জানবো বিশ্বগ্রাম (Global Village) কি? বিশ্বগ্রামের ধারণা এবং এর সুবিধা অসুবিধা? তাহলে বন্ধুরা শুরু করা যাক।

বিশ্বগ্রাম (Global Village) কি?

বর্তমান আধুনিক বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এত বেশি যে আধুনিক সভ্যতা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আলদাভাবে চিন্তা করা যায় না। 

তথ্য প্রযুক্তির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, আচার ব্যবহার একাকার হয়ে গিয়েছে। তাই দেখা যাই, মানুষ বিভিন্ন দূরত্বে বসবাস করেও মনে হচ্ছে তারা একটি বিশ্বগ্রামে বাস করছে।

বিশ্বগ্রামের ধারণা (The concept of world village)

একটি গ্রাম সাধারণত আয়তনে ছোট হয়ে থাকে। গ্রামের প্রতিটি মানুষ তার প্রতিবেশিকে চিনে এবং সহজে তথ্য বিনিময় করতে পাড়ে। এছাড়াও প্রয়োজনে একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসে এভাবে একে অন্যের সাথে নিবির সম্পর্ক স্থাপন করে এবং শান্তিতে বসবাস করে। আর এটি সম্ভব হয় গ্রামের আয়তন ছোট হলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হয়। 

অন্যদিকে অনেকগুলো দেশের সমন্বয়ে হয় বিশ্ব। আয়তনে এটা বিরাট (বড়) হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের পরিধি ছোট হয়ে এসেছে। এই মুহুত্বে বিভিন্ন ধরণের মিডিয়ার কল্যানে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) এর ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বিশ্বের প্রতিটি মানুষই খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। 

পৃথিবীর যেকোন ব্যক্তি যে কোন সময় একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে। তথ্যের এই আদান প্রদান বিশ্বকে এতটাই কাছে নিয়ে এসেছে যে গোটা বিশ্বকে আজ আমরা "ভার্চুয়াল ভিলেজ" হিসেবে গন্য করতে পারছি।

এক্ষেত্রে কম্পিউটার, টেলিভিশন, টেলিফোন, ইন্টারনেট সহ আরও কিছু প্রযুক্তির মাধ্যমে দুরত্বে ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়ে পৃথিবীকে গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করেছে।

বিশ্বগ্রামের ধারণা প্রবর্তক (The promoter of the Global Village concept)

বিশ্বগ্রাম (Global Village) ধারণাটি সর্ব প্রথম প্রবর্তন করেন মার্শাল ম্যাকলুহান (Marshall Mcluhan)। তিনি ছিলেন একজন কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপক এবং বিখ্যাত দার্শনিক। ১৯১১ সালের ২১ জুলাই কানাডাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
মার্শাল ম্যাকলুহান (Marshall Mcluhan)

"দি মিডিয়াম ইজ দি মেসেজ" (The Medium is the Message) এবং ''গ্লোবাল ভিলেজ" (Global Village) এর উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিতি লাভ পেয়েছিলেন। মার্শাল ম্যাকলুহান তার প্রকাশিত দুটি গ্রন্থে "The Gutenberg: the Making of Typographic Man" এবং "Understanding Media" তে তিনি বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণা দেন।

বিশ্বগ্রাম (Global Village) কি?

বিশ্বগ্রাম হলো তথ্য প্রযুক্তির বন্ধনে আবদ্ধ একটি এলাকা। যেখানে এক দেশকে অন্য দেশের সাথে এক ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তির সাথে এবং এক প্রতিষ্ঠানকে অন্য প্রতিষ্ঠনের সাথে যুক্ত করেছে। পুরো বিশ্বকে একটি একক সমাজে পরিণত করেছে। তাই পৃথিবী একটি ভার্চুয়াল গ্রামে পরিণত হয়েছে।

অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যাই, গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম এমন একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা যেখানে ইন্টারনেট ও ইলেকট্রিক মিডিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মানুষই একটি সমাজে বসবাস করে এবং একে অপরকে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে থাকে।
বিশ্বগ্রাম (Global Village) কি?
ইন্টারনেট ও ইলেকট্রিক মিডিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈশ্বিক যোগাযোগের ব্যবস্থাসমৃদ্ধ স্থানকে গ্লোবাল ভিলেজ বলে। প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব একটি ভার্চুয়াল গ্রামে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেট ও মিডিয়া কমিউনিকেশনের ফলে দেশ হয়েছে একটি পরিবার।

ফলে মানুষ বিভিন্ন দুরত্বে বসবাস করেও তাৎক্ষণিকভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে।

বিশ্বগ্রামের সুবিধা

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশ্বটাকে বিশ্বগ্রামে পরিণত করার ফলে উপযুক্ত সমস্যাগুলো সহজে সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বগ্রামের সুবিধা নিচে দেওয়া হলোঃ-
  • বিশ্বগ্রামের ফলে মানুষ বিভিন্ন দুরত্বে বসবাস করেও তাৎক্ষণিকভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে।
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ বর্তমানে গোটা বিশ্বের সাথে অতি সহজে যোগাযোগ করতে পারছে।
  •  ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের খবর অতি অল্প সময়ে নেয়া যাচ্ছে।
  • অন-লাইনে কেনা কাটার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
  • আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে এক দেশের লোক অন্য দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ ঘরে বসেই করতে পারছে এবং বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ উপার্জন করতে পারছে।
  • ই-কমার্সের ফলে ব্যবসা বাণিজ্য সহজ হয়েছে।
  • বিশ্বগ্রামের ফলে সাংস্কৃতিক তথ্যাদি বিনিময় করতে পারছে।
  • টেলিকনফারেন্সিং ও ভিডিওকনফারেন্সিংয়ের সুবিধা পাওয়া যাই।

বিশ্বগ্রামের অসুবিধা

  • ইন্টারনেট এর অবাধ ব্যবহারের ফলে অনৈতিক কাজ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে হ্যাকিং এর মাধ্যমে গোপনীয় তথ্য চুরি হচ্ছে।
  • অসত্য তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
  • সাইবার আক্রমণ সংঘটিত হওয়া।
  • বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • প্রযুক্তি বেশি ব্যবহারের ফলে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
  • ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরি। 
  • তথ্য গোপনীয়তা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার প্রধান উপাদান সমূহ (Key elements in establishing the Global Village)

তথ্য ও যোগোযোগ প্রযুক্তির উদ্ভাবিত ইন্টারনেট ও ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়েব বিশ্বগ্রামের বিচরণের বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 
বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠায় প্রধান উপাদানগুলো হচ্ছে-

১। হার্ডওয়্যার (Hardware)
২। সফটওয়্যার (Software)
৩। নেটওয়ার্ক সংযুক্ত বা কানেকটিভিটি (Network Connectivity)
৪। ডেটা (Data)
৫। মানুষের জ্ঞান ও সক্ষমতা (Capacity)

১। হার্ডওয়্যার (Hardware): বিশ্বগ্রামে যে কোন ধরনের যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত হার্ডওয়্যার সামগ্রীর। হার্ডওয়্যার হচ্ছে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিসমূহ যেমন কম্পিউটার, মডেম, প্রিন্টার ইত্যাদি। বিশ্বগ্রামে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার যেমন:- কম্পিউটার, মডেম, নেটওয়ার্ক কার্ড, হাব, সুইচ, রাউটার ইত্যাদি।

২। সফটওয়্যার (Software): বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠায় সফটওয়্যারের গুরুত্ব অপরিসীম। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হার্ডওয়্যারগুলোকে সচল করার জন্য প্রয়োজন হয় সফটওয়্যার। সফটওয়্যার হল কতকগুলো নির্দেশের সমষ্টি। বিশ্বগ্রামে যোগযোগ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজিং সফটওয়্যার, ওয়েব পেজ ডিজাইন সফটওয়্যার, প্রোগ্রামিং ভাষা ইত্যাদি।

৩। নেটওয়ার্ক সংযুক্ত বা কানেকটিভিটি (Network Connectivity): ইন্টারনেট হল বিশ্বগ্রামের সংযুক্ততার মেরুদন্ড। ইন্টারনেট এর মাধ্যমেই মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করে একে অপরের সাথে সহজে যোগাযোগ করতে পারে এবং বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। নিরাপদ তথ্য আদান- প্রদানই হচ্ছে বিশ্বগ্রামের মূলভিত্তি। বর্তমানে মোবাইল ফোন, ফিক্সড ফোন টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের সাথে সরাসরি সংযুক্ত।

৪। ডেটা (Data): বিশ্বগ্রামে ডেটা হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবাদ সম্পদ। কম্পিউটারে ব্যবহৃত বর্ণ, সংখ্যা, চিহ্ন, অডিও, ভিডিও ইত্যাদিকে বলা হয় ডেটা। ডেটা সাজিয়ে অর্থপূর্ণ ফলাফলের মাধ্যমে তৈরি করা হয় তথ্য।

৫। মানুষের জ্ঞান ও সক্ষমতা (Capacity): বর্তমান বিশ্বে যে দেশ তথ্য প্রযুক্তিতে যত বেশি উন্নত সে দেশ ততো বেশি সমৃদ্ধশালী। বিশ্বগ্রাম মূলত তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর। মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি দ্বারা তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামো ব্যবহার করে বিশ্বগ্রামের সুফল পাওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ


এই টপিক টি পুরোটা পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, এই টপিক এর ভিতর কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে আপনারা কমেন্ট করুন। আশা করি, উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ ‍Amarload.com এর সাথে থাকার জন্য।

About the Author

I am a web designer. I blogging regularly. I try to write this blog in my spare time. I would be grateful if you could master something from this blog of mine.
Lyrics Amarload I work for blogger practice and for the experience I work on this website…

Post a Comment

আমার পোস্ট পড়ে যদি ভালো লাগে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানাবেন, আর ভালো না লাগলে কোন বিষয়ে ভালো লাগে নাই তা বিস্তারিত লিখবেন, আশা করি উত্তর পাবেন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.