স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য কি



স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য কি
স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য কি

স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য কি

  • অথবা, স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের বৈসাদৃশ্য বর্ণনা কর ।
  • অথবা, স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মধ্যে অমিলসমূহ তুলে ধর।

উত্তর : ভূমিকা : স্থানীয় সরকার ও স্থানীর স্বায়ত্তশাসিত সরকারের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 

রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সব কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় সরকারকে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার কাজ করে যাচ্ছে। 

স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে একটি এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম সুনিশ্চিত হয় । সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন কেন্দ্রীয় প্রশাসনের একটি অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।

স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য : স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মধ্যে বহুবিধ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। 

নিম্নে পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হলো :

১. সংজ্ঞাগত : সরকার ব্যবস্থায় দেশের সমগ্র এলাকাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এলাকাতে ভাগ করে করারোপসহ সীমিত ক্ষমতা প্রদান করাকে স্থানীয় সরকার বলে । 

অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের সব কার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকে লাঘব করার জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গঠিত প্রতিষ্ঠানই হলো স্থানীয় সরকার। 

অপরদিকে, সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কর্তৃক যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা পরিচালিত হয় তাকে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার বলা হয়। 

২. গঠনগত : স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ন্যূনতম পর্যায়ের সংগঠিত সরকার ব্যবস্থা। স্থানীয় সরকার গঠিত হয় মানুষের ক্ষমতা বিভাজনের মধ্য দিয়ে। 

যেমন— জেলা স্থানীয় সরকার জন্মলাভ করে ক্ষমতা বিভাজনের মধ্য দিয়ে আর স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার জন্মলাভ করে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে। যেমন— পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ।

৩. কাঠামোগত : স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মধ্যে কাঠামোগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এ পার্থক্যের ক্ষেত্রে ই. এল. হ্যারন তার একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব প্রদান করেছেন। 

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট হিসেবে যা কার্যকর থাকে তাই স্থানীয় সরকার । কিন্তু স্থানীয় সমস্যা সমাধানে সীমিত গণ্ডিতে যে সরকার কার্যকর থাকে তা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার । 

৪. লক্ষ্যগত : সরকারি নীতি বাস্তবায়ন ও জনকল্যাণমূলক কাজ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই হলো স্থানীয় সরকারের মূল লক্ষ্য। 

অপরদিকে, স্বায়ত্তশাসনের মূল লক্ষ্য হলো জনগণের দ্বারা স্থানীয় সমস্যার সমাধান করে জনগণের কল্যাণ সুনিশ্চিত করা। 

তাই আপাতদৃষ্টিতে বলা যায়, স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মূল লক্ষ্যই হলো জনকল্যাণসাধন করা ।

৫. বৈশিষ্ট্যগত : স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের দিক দিয়ে স্থানীয় সরকার শুধু কর্তব্য পালন করে কিন্তু স্বতন্ত্র ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নেই। 

অন্যদিকে, আইনগত ভিত্তি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা নিজস্ব তহবিল গঠনের জন্য করারোপের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ ও স্থানীয় সংস্থার আইনের মাধ্যমে প্রাপ্ত কর্তব্য ও স্বতন্ত্রবোধ বিদ্যমানতা হলো স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গঠন কাঠামোগত, আইনগত ভিত্তি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিক থেকে স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। 

তবে উভয়ের মধ্যে নানাবিধ পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও একটি অপরটির ওপর নির্ভরশীল এবং আধুনিককালে উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url